• শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪২৮
পদ্মার পাড়ে গড়ে উঠছে ‘পদ্মা সেতু জাদুঘর’

পদ্মা সেতু জাদুঘরে প্রাণীর নমুনা

ছবি : মঈদউদ্দিন সুমন

জীব ও পরিবেশ

পদ্মার পাড়ে গড়ে উঠছে ‘পদ্মা সেতু জাদুঘর’

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ১,৬৯৭ প্রাণীর নমুনা সংগ্রহ

  • মঈনউদ্দিন সুমন, মুন্সীগঞ্জ
  • প্রকাশিত ০৭ অক্টোবর ২০১৮

পদ্মা সেতু মানেই বিশাল যন্ত্রাংশ আর স্প্যান জোড়া দিয়ে নির্মাণ নয়! এ বিশাল স্থাপনা নির্মাণে প্রভাব পড়ে পরিবেশে, ক্ষতিগ্রস্ত হয় জীবসত্তা। বিষয়টি মাথায় রেখে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ‘পদ্মা সেতু জাদুঘর’ নির্মাণে উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে গত আড়াই বছরে দেড় সহস্রাধিক প্রাণীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে নমুনা সংগ্রহ।

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের দোগাছি পদ্মা সেতু সার্ভিস এরিয়া-১-এ সংগ্রহ করা হচ্ছে প্রাণী ও প্রাকৃতিক সম্পদের নমুনা। প্রাণীবিদ ও স্থানীয়দের সহায়তায় সেতু প্রকল্পের জীববৈচিত্র্য ও দেশব্যাপী চলছে প্রাণীর মরদেহ সংগ্রহ। জাজিরা প্রান্তে সেতু কর্তৃপক্ষ এসব পদ্মা সেতু জাদুঘরে সজ্জিত করবে। ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এ কার্যক্রম। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১,৬৯৭টি প্রাণীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ জন অধ্যাপক এ জাদুঘরে কর্মরত আছেন।

পদ্মা সেতু জাদুঘর সূত্রে জানা যায়, স্তন্যপায়ী প্রাণীর নমুনা ৫৮টি ও প্রজাতি ২২১টি সংগ্রহ করা হয়েছে। স্তন্যপায়ী ৫৮, পাখি ১৭৭ ,সরীসৃপ ১১১, উভচর ৫১, মাছ ৩০৬,  চিংড়ি ও কাঁকড়া ৬৫, জলজ দুটি, স্থলজ ১৫টি, অন্যান্য ৫১টি। এর মধ্যে গঙ্গা নদীর শুশুক ও চিতাবাঘ উল্লেখযোগ্য।

জাতীয় পাখি ১২টি এবং নন-প্যাসারিনের অন্তর্ভুক্ত ২৮টি। এর মধ্যে উদয়ী বাবুবাটান পাখি উল্লেখযোগ্য। সরীসৃপ প্রাণীর ৯৩টি নমুনা ও ২৯টি প্রজাতি সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে টিকটিকি সাতটি, সাপ ১৫টি, কচ্ছপ সাতটি। নদীচর কচ্ছপ ও হলুদ সাপ রয়েছে। জলজ ব্যাঙ ১৮টি এবং স্থলজ ব্যাঙ একটি। ঝিঁঝিঁ ব্যাঙ উল্লেখযোগ্য।

মাছের নমুনা ৩০৬টি সংগ্রহ হয়েছে। এর মধ্যে মিঠা পানির মাছ ১৭৭টি ও লোনা পানির মাছ ৩১টি এবং সামুদ্রিক মাছ ৪৬টি। নানা বর্ণের ছাপযুক্ত বড় বান মাছ, ইলিশ মাছ (২.২ কেজি), মাগুর মাছ, মলাস্কা শ্রেণির প্রাণীদের নমুনা ও প্রজাতি সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩৩টি। শামুক ৬০টি, ঝিনুক ৭০টি, শুঁড়ওয়ালা শামুক তিনটি। এর মধ্যে গঙ্গার ঝিনুক ও পরজীবী ঝিনুকও রয়েছে। কঠিন আবরণযুক্ত জলজ প্রাণীর ৬০টি নমুনা ও ৫৩টি প্রজাতি সংগ্রহ হয়েছে। এর মধ্যে কাঁকড়া ৬৫টি, চিংড়ি ৬১টি, গলদা চিংড়ি দুটি, গুগলি শামুক তিনটি, কীট চিংড়ি একটি। ফুলের কাঁকড়া ও নদীর চিংড়ি উল্লেখযোগ্য।

প্রজাপতি ও পোকার ২২১টি নমুনা ও ২৯৯টি প্রজাতি সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রজাপতি ৯৭টি, পোকা ৩৪টি। গোলাকার পাল্ম রেডআই, তসর রেশম গুটি মথ বিশেষ সংগ্রহ। কীটপ্রতঙ্গের ২৫৫টি নমুনা ও ১৭৭টি প্রজাতি সংগ্রহ হয়েছে। গুবরেপোকা ৫০টি, ছারপোকা ২৩টি, মৌমাছি ও ভিমরুল ২১টি, মাছি ১৫টি, তেলাপোকা তিনটি, কানকোটারি দুটি, ফড়িং ৩৫টি, ড্রাগন মাছি ও ছোট আকৃতির ৩৪টি। অমেরুদণ্ডী প্রাণীর নমুনা ৪০টি ও প্রজাতি ৩৬টি সংগ্রহ হয়েছে। এর মধ্যে খণ্ডাকৃতির কৃমি পাঁচটি, নিডারিয়া দুটি, বৃত্তাকার কীট দুটি, বিছা ও কৃমি একটি।

মাছ শিকারের ১০টি উল্লেখযোগ্য সরঞ্জামাদি ও কারুশিল্প সংগ্রহ হয়েছে। পাখির বাসা ২৩টি ও মৌটুসি পাখির বাসা উল্লেখযোগ্য। পাখির ডিম সংগ্রহ ১২টি ও এশিয়ান শামুকের ডিম বিশেষ সংগ্রহ। বকের থেকে বড় (৬৮ সে. মি.) কালচে চঞ্চু। কঙ্কাল মিলেছে আটটি। মাছধরা বিড়াল, মনোক্লেড কোবরা সাপ ।

পদ্মা সেতু জাদুঘরের ফিল্ড অফিসার ও জাদুঘরের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুমন মণ্ডল বলেন, জাদুঘরে পদ্মার জেলেদের ব্যবহূত জাল ও নৌকাও স্থান পেয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জাদুঘরের মাধ্যমে আগের নিদর্শন ও বৈচিত্র্য সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে পারবে। দেশে যেসব প্রাকৃতিক জীবজন্তু আছে, সেগুলো ধারণ করবে জাদুঘরটি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads