বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সিলেট অফিসে দালালের দৌরাত্ম্য বাড়ার অভিযোগ উঠেছে। টাকা ছাড়া এখানে কেউ কাজ করতে গেলে কোনো দিশা খুঁজে পায় না বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এ জন্য কেউ কেউ সিলেট বিআরটিএ অফিসকে ‘ভূতের বাড়ি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য লার্নার ফরম নেওয়া থেকে শুরু করে জমা দেওয়া, পরীক্ষা, ফিল্ড টেস্ট, বায়োমেট্রিক ছাপ, নবায়ন; এ ছাড়া গাড়ির ফিটনেস, রোড পারমিটসহ সব কাজে দালালের মাধ্যমে না গেলে ভোগান্তির অন্ত থাকে না।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রথমে লার্নার হতে হয়। তিন মাসের জন্য লার্নার হিসেবে গাড়ি চালানোর অনুমোদন দেওয়া হয়। দুই মাস পরে পরীক্ষা নেওয়া হয় (লিখিত-১০, ভাইভা-২০, ফিল্ড টেস্ট-৭০)। পরীক্ষায় পাস করলে পুলিশ ভেরিফিকেশন, বায়োমেট্রিক ছাপসহ আনুষঙ্গিক কাজে মোট সাড়ে তিন মাসে লাইসেন্স পাওয়া যায়। পেশাদার লাইসেন্স পেতে প্রায় দুই হাজার এবং অপেশাদার লাইসেন্স পেতে প্রায় তিন হাজার টাকা লাগে। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাত হাজার টাকার নিচে কোনো লাইসেন্স করা যায় না এবং আট মাস থেকে এক বছরের আগে সেই লাইসেন্স পাওয়া যায় না।
সরেজমিনে বিআরটিএ অফিসে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু লাইসেন্সই নয়, গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেটের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি বাদে মোটরসাইকেলের জন্য দিতে হয় ৭০০ টাকা, কার, মাইক্রোবাস, লেগুনা, হাইয়েসের জন্য এক হাজার, বাস দুই হাজার এবং ট্রাকের জন্য দিতে হয় তিন হাজার টাকা। একইভাবে রুট পারমিটের জন্যও প্রত্যেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা দিতে হয়।
দীর্ঘদিন গাড়ি ব্যবসায় সম্পৃক্ত মকসুদ আহমদ বলেন, সিলেট বিআরটিএ ‘ভূতের বাড়ি’। এখানে কেউ নিয়ম মেনে চলতে গেলে তিনি দিশাহারা হয়ে বেরিয়ে আসবেন। আট মাস পূর্বে, দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থাকার পরও নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে গিয়ে নির্ধারিত প্রায় তিন হাজার টাকা খরচের জায়গায় ঠিকই সাত হাজার টাকা খরচ এবং ছয় মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। নিজের শ্রম, সময় ও অর্থ ব্যয় করে সীমাহীন ভোগান্তির জন্য পরে নিজেকেই তিরস্কার করেছি। বিআরটিএ অফিস ভোগান্তিমুক্ত করতে এবং গাড়ির কাগজ ও লাইসেন্স প্রক্রিয়া সহজ করতে নীতিনির্ধারকদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ট্রাক-পিকআপ-কভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমদ বলেন, অনেকেই আছেন টাকা খরচ ও ভোগান্তির ভয়ে লাইসেন্স করতে যান না। ভোগান্তি ছাড়া নির্ধারিত সময়ে লাইসেন্স করা গেলে সবাই লাইসেন্স করতে উদ্যোগী হবে।
এ ব্যাপারে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেটের উপদেষ্টা মো. জহিরুল ইসলাম মিশু বলেন, নিরাপদ সড়ক এখন জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। সড়ক নিরাপদ করতে হলে চালকদের দুর্ভোগ লাঘব করতে হবে এবং বিআরটিএকে জনবান্ধব-স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে।
তিনি বলেন, লাইসেন্স সবাই নিতে আগ্রহী। কিন্তু ভোগান্তির বিষয়টি যখন চিন্তা করে, তখন অনেকে পিছু হটেন। বিআরটিএতে কোনো অনিয়ম থাকলে সরকারি সংস্থা র্যাব, দুদক ব্যবস্থা নিতে পারে। একই সঙ্গে বিআরটিএর কাঠামোগত সম্প্রসারণে সরকারের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিলেট বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক মাহবুব কবির বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমার জানা মতে আমাদের অফিসে কোনো দালাল চক্রের তৎপরতা নেই। যদি থেকে থাকে তাহলে দালালমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।