গত ২ জুলাই মধ্যরাতে রাজধানীর বনশ্রী এলাকার একটি বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় বর্ণালী মজুমদার নামে গৃহিনীকে হাসাপাতালে নিয়ে যায় তার স্বামী মিথুন দে। রাত ১২টার দিকে স্বামী মিথুন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বর্ণালীর মৃতের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে তার স্বামী মিথুন লাশ হাসপাতালে ফেলে রেখে রহস্যময়ভাবে আগেই রামপুরা থানায় গিয়ে আটকের নাটক করে বলে অভিযোগ করে বর্ণালীর পরিবার। এরপর থেকেই এই মৃত্যু নিয়ে চলে নানা গুঞ্জন ও রহস্য!
বর্ণালী কী কারণে মারা গেছেন, তার মৃত্যুর সঠিক তদন্ত রামপুরা থানায় হবে কিনা- তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তার মা-বাবা। তারা মামলার সঠিক তদন্তের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
বর্ণালী মজুমদার মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের দাবিতে আজ মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (৭ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে তাঁরা এ দাবি জানান।
মানববন্ধনে উপস্তিতি ছিলেন বর্ণালীর চাচাতো বোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী পূজা মজুমদার। তিনি তার বোনের মৃত্যুর সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যেন বের হয়ে হয়ে আসে। আত্মহত্যা হলে তার পেছনে প্ররোচনাকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। আর যদি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড হয়ে থাকে তাহলে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’
সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সালমা আহমেদ বলেন, 'আমরা এভাবে আর কোন মৃত্যু চাইনা। আর কোন নারীকে যেন এভাবে মৃত্যুবরণ করতে না হয়। তাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের সামনে দাঁড় করানো হোক।'
সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সভাপতি শেখ আদনান ফাহাদ বলেন, 'বর্ণালী মজুমদার আমাদের রাষ্ট্রের অনেক নির্যাতিত নারীর প্রতিনিধি। আমরা জানতে পেরেছি বর্ণালীর শ্বশুরের পরিবারে একজন পুলিশে চাকরি করেন। পুলিশ শুধু নিহতের স্বামীর নামে মামলা নিয়েছে। শুধু একজনের জন্য পুলিশ ডিপার্টমেন্টের অর্জন ম্লান হতে পারেনা। আমরা আশা করবো দোষীর পরিবারকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সংহতি জানিয়ে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে।
মানবন্ধনে আরও উপস্থিাত ছিলেন, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের প্রভাষক মৃধা মো. শিবলী নোমান, শারীরিক শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিচালক এস এম সাদাত হোসেন প্রমুখ।
জানা যায়, রাজধানীর বনশ্রী এ-ব্লকের একটি বাসা থেকে ২ জুলাই রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থাায় বর্ণালীর স্বামী মিথুন দে রাহুল তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, ৫ বছর পূর্বে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের বাবুল মজুমদারের মেয়ে বর্ণালী মজুমদারের সঙ্গে পৌর ৬নং ওয়ার্ডের চুনি লাল দে’র ছেলে মিথুন দে ওরফে রাহুলের পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়। হত্যার আগে ঢাকার বনশ্রীতে স্বামীর সাথেই থাকতো বর্ণালী।