রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে রাশিয়া। ১৮টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই কাজে যুক্ত। আর তত্ত্বাবধায়নে রয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক প্রতিষ্ঠান রোসাটম। প্রায় ২৫ হাজার কর্মী বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচ হাজার চারশ কর্মীই রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের। আর ইউক্রেনের কর্মী রয়েছে প্রায় ২১০জন। মোট ইউক্রেনের কর্মীদের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের ১০ থেকে ১২ জন পরিবারসহ রয়েছে রূপপুরে।
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থিত বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ওপর পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজে কোন উত্তেজনা নেই রাশিয়া-ইউক্রেন কর্মীদের। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রভাব পড়বে না রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরই এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালুর কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত পারমানবিক প্রকল্পে কাজে বাধাগ্রস্থ হয় নি। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এখন সরকার ও দায়িত্বশীলরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। এরই মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দায়িত্ব পালনকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে রোসাটম কর্তৃপক্ষের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটম এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ও কাজের সময়সূচিতে কোনো পরিবর্তন হবে না।’
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে তৈরি হবে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ভিভিআর-প্রযুক্তির রিঅ্যাক্টরের দু’টি ইউনিট। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরই প্রথম ইউনিট চালু হবে। এটি দেশের প্রথম পারমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, যা রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় নির্মাণ হচ্ছে। সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। আর দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে ২০২৪ সালে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তথ্যসূত্রে জানা যায়, ইউক্রেন কর্মীরা রাশিয়ান পারমানবিক কর্পোরেশন কতৃর্ক নিয়োগপ্রাপ্ত। ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন সমসাময়িক পরিস্থিতিতে কাজ করতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না ইউক্রেন কর্মীদের। কিন্তু যাদের পরিবার-পরিজন ইউক্রেনে রয়েছে তাদের জন্য চিন্তিত তারা। দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ না হলে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে জানান একটি সূত্র।
এই প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রায় পাঁচ হাজার চারশ কর্মী রয়েছে রাশিয়াসহ বিদেশী। রাশিয়ার ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রভাব পড়বে না রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজে।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আসাদুজ্জামান বাংলাদেশের খবরকে জানান, রাশিয়ার ও ইউক্রেনের যুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজের পরিস্থিতি স্বাভাবিক চলমান রয়েছে। প্রকল্পের সার্বিক নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পি. এম ইমরুল কায়েস বাংলাদেশের খবরকে জানান, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রভাব যেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজে না পড়ে সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ও রাশিয়ান দূতাবাস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।