• শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪২৮
পদ্মা-মেঘনায় বালু উত্তোলন বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

পদ্মা-মেঘনায় বালু উত্তোলন বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন

  • চাঁদপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৫ মার্চ ২০২২

নদী থেকে যত্রতত্র অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধ করে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নকে বাঁচাতে ও ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন নদী বেষ্টিত রাজরাজস্বর ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগন।

শুক্রবার সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সম্মুখে ও ভাঙনকবলিত নদীর তীরে হাজার হাজার নারী-পুরুষ মানববন্ধন করেন।

জানা গেছে, চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে শত শত ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙনের শিকার হচ্ছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। ভাঙনরোধে সরকার শত শত কোটি টাকা ব্যয় করলেও ভাঙন পুরোপুরি থামানো যায়নি। উপরন্তু বালু বিক্রি করে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে শুধু ভাঙনই নয়, এ অঞ্চলে ইলিশ কম আসছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীর জীববৈচিত্র্য। এ অবস্থায় নদীতে অপরিকল্পিত ড্রেজিং বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভাঙনকবলিতরা।

সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে ষাটোর্ধ্ব সুফিয়া বেগম ও জাহানারা বেগম বলেন, আমরা বাড়ী-ঘর লইয়া কয়েকবার  ভাঙ্গনের কবলে পড়ছি।  ‘নদী থেকে বালু কাইট্টা নেওনের কারণে আমাগো বাড়ি, ঘর, জমি নদীতে চলে যাচ্ছে। আমরা পথের ভিখারি হয়ে গেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন, আমাগোরে একটু সহযোগিতা করেন। নদী ভাইঙা আমাগোরে শেষ কইরা দিছে। আমরা কই যামু? আমরা কই গিয়া বাড়িঘর করমু? আমাগো থাকোনের জায়গা নাই। একটু ড্রেজারগুলো বন্ধ করেন।’

ভাঙনের শিকার রাজরাজেশ্বরের শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাড়ি-ঘর নদীতে কয়েক বার বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙনের বড় কারণ, নদীতে বালুদস্যুতা। এখান থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু কেটে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করছে একটি চক্র। এতে আমাদের জমি ভেঙে শেষ হয়ে যাচ্ছে। যদি তাদেরকে বালু কাটা থেকে বিরত রাখা যেতো, তাহলে আমাদের জন্মস্থান রক্ষা পেতো।

ভাঙনকবলিত আবুল হাসেম বলেন, এই রাজরাজেশ্বর বিভিন্ন এলাকা কয়েকবারই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আমি অন্তত ১২ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছি। ঘরবাড়ির পাশাপাশি চাষাবাদের জমিও বিলীন হচ্ছে। নদী খননের নামে ড্রেজিং করে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নটাকে পুরোপুরি বিলীনের পাঁয়তারা করছে একটি চক্র। প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ, আমাদেরকে এই বালুখোরদের হাত থেকে রক্ষা করুন। যদি এভাবে বালু কাটা অব্যাহত থাকে তাহলে একদিন আমরা নিঃস্ব হয়ে যাবো। পূর্বপুরুষের ভিটামাটি সব হারাবো।

এ বিষয়ে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রেফাত জামিল বলেন, ব্যক্তিগতভাবে কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যে বালু উত্তোলন করছে, তা তারা বৈজ্ঞানিকভাবে তুলছে না। তারা চাহিদাভিত্তিক বালু তুলছেন। যেখানে বালু পাচ্ছে সেখান থেকেই তারা বালু তুলছে। নদীর গতিপথ আছে। এই গতিপথের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কোথায় পানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সেসব জায়গায় যদি ডুবোচর থাকে এবং কতটুকু গভীরতায় যেতে হবে, সেটা একটি স্তরের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু যারা বালু উত্তোলন করছেন তারা সেটা মানছেন না।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উপ-পরিচালক কায়সারুল ইসলাম বলেন, ড্রেজিংয়ের নামে তৃতীয় পক্ষ যেভাবে বালু উত্তোলন করে, সেটা নদীর জন্য ভালো নয়।

চাঁদুপুরে পদ্মা-মেঘনার সম্পদ, নদীভাঙন রোধ ও ইলিশ রক্ষায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। গত ২ মার্চ ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (খাস জমি) জহুরুল হককে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, সমন্বয় সভা, ইলিশ রক্ষায় টাস্কফোর্সের সভা ও নদী রক্ষা কমিটির যে সভা হয়েছে, সেখানে সংশ্লিষ্টদের মতামতের রেজুলেশন ছিল। মামলা করে নদী থেকে যেভাবে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করা হচ্ছে, এতে নদীর কি পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে, তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, নদী ও ইলিশ গবেষক উল্লেখ করেছেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে বালু উত্তোলন বন্ধে মামলাগুলোর আদেশ ভ্যাকেট (আদেশ তুলে নেওয়া) করতে নদী এবং ইলিশ রক্ষায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নদী রক্ষা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে বিষয়গুলো জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। চিঠি পাওয়ার পরই ভূমি মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে তদন্তের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বালু উত্তোলনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। সভায় জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বিআইডব্লিউটিএর তথ্যমতে চাঁদপুরের নদী থেকে যে প্রক্রিয়ায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, ঠিক না। এতে নদীর ক্ষতি হচ্ছে এবং জীববৈচিত্র্যেরও ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া এই প্রক্রিয়ায় বালু উত্তোলনের ফলে সরকার কোনও রাজস্ব পাচ্ছে না। সেলিম খান নামে এক ব্যক্তি আদালতে মামলা করে ২০১৫ সাল থেকে বালু তুলছেন। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বালু উত্তোলন বন্ধ এবং নদী ও ইলিশ রক্ষায় যা যা করণীয় তা প্রশাসন করবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads