কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া প্রতিনিধি :
দিগন্তজোড়ে সবুজের সমারোহ। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু সবুজ আর সবুজ চোখে পড়ছে। ফাঁকা নেই যেন ফসলের মাঠ। রোদ-বৃষ্টির খেলায় সবুজের আভা ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে। নীল আকাশের সাদা মেঘের ভেলা, যেন সবুজের গাঢ় রঙ্গে একাকার হয়ে আছে। সকালের সূর্যের আলো ছড়িয়ে দেয় এক ধরনের মুগ্ধতা, দুপুরে অন্যরকম, বিকেলের গোধুলীর রং ছড়িয়ে পড়ে সবুজ ঘেরা মাঠে। গরম আর হাল্কা হাওয়ায় আপন মনে দোল খাচ্ছে আমন ক্ষেত। ইতিমধ্যে আমন জমিতে শীষ আসতে শুরু করেছে। কোন কোন জমিতে ধান পাকতে শুরু করেছে। আর ধানের ক্ষেতকে ঘিরে স্থানীয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার কৃষকরা স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করেছে। এমন সময় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আমন ক্ষেতে ইঁদুরের উৎপাত শুরু হয়েছে। ইঁদুর ক্ষেতের অপরিপক্ক (কাঁচা) ধানগাছ কেটে ফেলছে। কৃষকরা ইঁদুর নিধনে বিভিন্ন ফাঁদ পাতলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে স্থানীয় কৃষকরা ফলন নিয়ে দ:ুশ্চিন্তায় পড়ছেন।
এদিকে ইঁদুরের হাত থেকে আমন ধান বাচাঁতে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা খুবই তৎপর হয়ে উঠেছেন। তারা কৃষকের ফসল রক্ষায় নিরলস ভাবে কাজ করছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পৌর শহরসহ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধান রোপণের পর থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকেরা বুক বেঁধেছেন। কিন্তু ইঁদুর তাঁদের সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত করছে। বেশির ভাগ এলাকায় ধানের জমিতে ইঁদুরের উৎপাত বেড়ে গেছে। দলবদ্ধ ইঁদুর ধান ক্ষেতের মাঝে গিয়ে থোড় আসা ধান প্রতি রাতে কেটে ফেলছে।
সরেজমিনে পৌর শহরের তারাগন, দেবগ্রাম, উপজেলার মোগড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চলতি মৌসুমের অনেক কৃষকের আমন জমি ইঁদুর কেটে ফেলছে। অনেক কৃষক ইঁদুর মারার জন্য ওষুধ ব্যবহার করেও ফল পাচ্ছেন না। এ বছর মাঠের ধান ভালো হলেও ইঁদুরের উৎপাতের কারণে ফসলের কিছু ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
কৃষক মো: আলম মিয়া বলেন, এ মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করা হয়। ইতিমধ্যে জমিতে শীষ আসতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে ইঁদুরের উৎপাত বেড়ে গেছে। প্রতিরাতে ইঁদুর ধান কেটেনষ্ট করছে। নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েও কোনো কাজে আসছে না। তিনি আরো বলেন আমনের যে কোন ব্যাধি থাকলে কীটনাশক প্রয়োগ করে কিছুটা কমে। কিন্ত ইঁদুরের অত্যাচারে ক্ষেতে বিষ মাখা বিভিন্ন পদ্ধতিতে টোপ, আতব চালের টোপ কিংবা ফাঁদ পেতেও কোন প্রতিকার মিলছেনা। ক্ষেত থেকে ইঁদুর দুর করতে না পারলে বড় ধরণের লোকসান গুনতে হবে।
কৃষক মো: আব্দুল আলী বলেন, নানা প্রতিকুলতা অপেক্ষা করে এ মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলণশীল ধান চাষ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে জমিতে শীষ আসতে শুরু করেছে। কিন্তু ইঁদুরে আক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষি অফিসের পরামর্শে ওষধ দেওয়া হয়েছে। এখন যদি ইঁদুরের আক্রমণ কমে যায় তাহলে ফলন ভালো হবে।
কৃষক মো: বাবরু মিয়া বলেন, মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টি হওয়ায় আমন ধান আবাদ করা হয়। গত কয়েক দিন ধরে ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ বেড়ে গেছে। ধানের ক্ষেতে শুকনো স্থানের চেয়ে পানি জমা ফসলের ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ বেশি হচ্ছে। ফলে কাঁচা ধানের গাছ ইঁদুর কেটে দেওয়ায় খুবই দ:ুশ্চিন্তার মধ্যে আছি।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা: তানিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে এ ধরনের খবর কিছু আমরা পেয়েছি। প্রতিটি ইউনিয়নে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বেশ তৎপর রয়েছেন। তাঁরা প্রতিদিন মাঠে গিয়ে কৃষকদের ইঁদুর মারার পদ্ধতি দেখিয়ে দিচ্ছেন। সেইসাথে তারা সচেতনতামূলক সভা ও লিফলেট বিতরণ করছেন ।
তিনি আরো বলেন ইঁদুর খুবই বুদ্ধিসম্পন্ন একটি প্রাণী। এজন্য জমির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এক ধরনের পাখি রয়েছে যে পাখি ইঁদুর ধরে খেয়ে ফেলে। তাদের জমিতে বসার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে। ফসল রক্ষায় ও ফলন বৃদ্ধিতে কৃষকদেরকে সার্বিকভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। আশা করছি এ মৌসুমে আমনের বাম্পার ফলন হবে।