• শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪২৮

সারা দেশ

শিল্পী আব্দুল জব্বারের জমি জাল করার অভিযোগ উঠেছে কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ০৭ নভেম্বর ২০২৩

আকরামুজ্জামান আরিফ, কুষ্টিয়া \

কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তান ও মুক্তিযোদ্ধার সময় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী জাতীয় শিল্পী পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আব্দুল জব্বারের জমি জাল করে দীর্ঘ দিন যাবত ভোগদখল করার অভিযোগ উঠেছে কুষ্টিয়ার রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক ও পৌরসভার ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ সোহেল রানা আশার বিরুদ্ধে। বর্তমানে জমির ক্রয়কৃত মালিক আব্দুল খালেক ও রশীদ সহ ৫ জনের নামের সাইনবোর্ড রাতের আধারে তুলে ফেলে সরিষার বীজ রোপন করা জমিতে পানি ঢুকিয়ে দিয়ে প্লাবিত করার অভিযোগও উঠেছে কাউন্সিলর আশার বিরুদ্ধে। এবিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় কাউন্সিলর আশার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন জমির বর্তমান মালিক মোঃ আব্দুল খালেক।

সুত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া শহরতলীর মোল্লাতেঘড়িয়া এলাকায় মোল্লাতেঘড়িয়া মৌজার আরএস ১৭৯ নং খতিয়ানের ১৯৩৯ ও ১৯৩৭ নং দুইটি দাগ। ১৯৩৯ নং দাগে ৬৩ শতক জমি আছে এবং ১৯৩৭ নং দাগে ৩৩ শতক জমি আব্দুল জব্বারের সম্পত্তি। আব্দুল জব্বার জীবিত থাকা অবস্থায় গত ২২/০৭/১৯৯০ ইং তারিখে ৬৩৫১ নাম্বার দলিলে এসএ ৭৩৭ নং দাগে ৭৪ শতক ও ৭২৯ নং দাগে ৩৮ শতক সর্বমোট ১১২ শতক জমি দুই পুত্র আহম্মেদ সালাউদ্দিন জব্বার ও আহম্মেদ মুয়াদ জব্বারের নামে দানপত্র রেজিস্ট্রি করে দিয়ে যায়।

উক্ত দলিলে এসএ দাগ ৭৩৭ এর স্থলে ৬৩৭ ভ্রমাত্মকভাবে লিখিত হয়। যা পরবর্তীতে গত ১১/০৬/২০০৬ তারিখে ২১৮৩ নং ভ্রমসংশোধন দলিলের মাধ্যমে তার দুই পুত্র আহম্মেদ সালাউদ্দিন জব্বার ও আহম্মেদ মুয়াদ জব্বারের নামে  ১ একর ১২ শতক জমি দানপত্র করে দিয়ে যায়। দানপত্রের সুত্র ধরে এই সম্পত্তির মালিক হয়ে যায় আব্দুল জব্বারের দুই পুত্র আহম্মেদ সালাউদ্দিন জব্বার ও আহম্মেদ মুয়াদ জব্বার।

এরপর জমির মালিকানার জের ধরে ২০০৬ সালে তারা দুই ভাই সালাউদ্দিন জব্বার ও মুয়াদ জব্বার নিজ নিজ নামে নাম পত্তন করেন। যার খতিয়ান নাম্বার ১৭৯/১। তারিখ ২০/০৬/২০০৬ ইং। এই জমিটির নাম পত্তন পরবর্তীতে ডিজিটাল নিয়ম চালু হওয়ার পরে ২৬/০৭/২০২২ ইং তারিখে পুনরায় নাম পত্তন করেন এবং হোল্ডিং নাম্বার ৯০০ তে সরকারি সেরেস্তায় ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে আসছে। আহম্মেদ মুয়াদ জব্বার ০৬/০৬/২০২৩ ইং তারিখে দুই ভাইয়ের ভাগের বন্টন থেকে নিজ ভাগীয় অংশ ৪৮ শতক জমি নিজ নামে নাম পত্তন করে ৩০৯৬ নাম্বার খারিজ খতিয়ানের ৩১০৩ নাম্বার হোল্ডিংয়ে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে আসছে। এরপর ৪৮ শতক জমির মালিক মুয়াদ জব্বার তার নিজ নামীয় জমি বিক্রয়ের ঘোষনা দিলে ১১/১০/২০২৩ ইং তারিখে ৪৮ শতক জমিটি আব্দুল খালেক ও আব্দুর রশীদ সহ ৫ জনের নামে খোস কবলা দলিলে বিক্রয় বিনিময়ে রেজিষ্ট্রি করে দেন। জমিটি রেজিষ্ট্রি হওয়ার পর গত ২২/১০/২০২৩ ইং তারিখে আব্দুল খালেক ও রশীদ সহ ৫ জনের নামে নাম পত্তন করে নেয়। যার খতিয়ান নাম্বার ৩২৫৮। যার হোল্ডিং নাম্বার ৩২৬২। তারপর ২২/১০/২০২৩ ইং তারিখেই সমস্ত  ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে দেন।

গত শুক্রবার ০৩/১১/২০২৩ ইং তারিখে ৪৮ শতক  জমির বর্তমান মালিক আব্দুল খালেক ও রশীদ সহ ৫ জন তাদের জমি স্থানীয় আমিন দ্বারা  মাপজোক করে চার কোনায় সীমানা নির্ধারন করে ইট, বালি ও সিমেন্ট দিয়ে বাউন্ডারি পিলার স্থাপন করেন। তারপর জমি চষে  সেখানে সরিষার বীজ রোপন করেন এবং নিজ নামীয় সাইনবোর্ড  দুইটি বড় খুটির মাধ্যমে জমির মাঝ বরাবর স্থাপন করেন  । সেসময় কাউন্সিলর আশা সেখানে এসে  জমিটি তার বলে দাবি করেন। তখন জমির বর্তমান মালিকরা সেই কাগজ দেখতে চাইলে তিনি দুইটি দলিল  দেখান। সেখানে একটি দলিল ২০১০ সালের।

সেই দলিলে লেখা রয়েছে ১৯৯০ সালে দানপত্র ভাবে আব্দুল জব্বার তার দুই পুত্র সালাউদ্দিন জব্বার ও মুয়াদ জব্বারকে দেওয়া দলিলটি বাতিল করা হয়েছে। যার আরএস ২৫৪৫ নাম্বার দাগের ৭৪ শতক দানকৃত জমির রেজিষ্ট্রি বাতিল করেন। যা আইন বহির্ভূত।  সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোন রেজিষ্ট্রিকৃত দলিল বাতিল করার জন্য বিচার বিভাগের অনুমতি প্রয়োজন হয়। এছাড়াও কাউন্সিলর আশা যেই দলিল দেখাচ্ছে  সেই দলিলের এসএ ও আরএস দাগ নাম্বার ভূল এবং দলিলের উপরে ওভার রাইটিং স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এতে জমির বর্তমান মালিকরা দাবি করছে কাউন্সিলর আশার দলিলটি ভূয়া এবং জাল। অন্যদিকে, আরেকটি দলিলে দেখা যায় গত ০৬/০৭/২০১০ ইং তারিখে ৫৬৪৫ নাম্বার দলিলে

উল্লেখ রয়েছে আব্দুল জব্বার ৭৫ শতক জমি কাউন্সিলর আশার নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে। যেখানে  ২০০৬ সালে আব্দুল জব্বারের দুই পুত্রর নামে নাম পত্তন হয়ে গেছে। আর জমি রেজিষ্ট্রি করার আগে নাম পত্তন বাতিল করতে হয়। কাউন্সিলর আশা নাম পত্তন বাতিল না করেই কিভাবে জমিটি রেজিষ্ট্রি করেছে এটি নিয়েও নানা ধরনের প্রশ্ন ও জলপনা কল্পনা শুরু হয়েছে জমির বর্তমান মালিকদের কাছে। তারা দাবি করছেন কাউন্সিলর আশার  দুইটি দলিলই ভুয়া এবং জাল।

এব্যাপারে আহম্মেদ মুয়াদ জব্বার বলেন, এই জমি আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। আমার বাবা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাতীয় সংগীত শিল্পী। আমার বাবা আমাদের দুই ভাইয়ের নামে জমিটি লিখে দিয়েছিলো। আমার ভাগের জমি আমি আব্দুল খালেকের কাছে বিক্রয় করে দিয়েছি। কাউন্সিলর আশা এখন আমাদের সেই জমি নিজের বলে দাবি করছে। সে একটি জাল দলিল করেছে। যার কোন ভিত্তি নেই।

জমির ক্রেতা আব্দুল খালেক বলেন, আব্দুল জব্বারের দুই পুত্রের মধ্যে এক পুত্র আহম্মেদ মুয়াদ জব্বারের নামে রেকর্ডীয় অংশ যা আমি ভূমি অফিস, ভূমি সংশ্লিষ্ট সকল কাগজ যাচাই বাচাই করে কাগজের সঠিকতা দেখে খরিদ করি। আমার নিজ নামীয় খারিজ এবং খাজনা পরিশোধ পূর্বক  নতুন বরাদ্দকৃত হোল্ডিং নাম্বার খুলে আমার জমি আমি হস্তগত করি। কিন্তু সোহেল রানা আশা উক্ত দিনে কোন কাগজপত্র প্রমান না করতে পেরে গত শনিবার রাতে আমার নাম সম্বলিত সাইনবোর্ড, আরও সার্ভেয়ারকৃত পরিমাপের সীমানা পিলার রাতের আধারে ভেঙ্গে তুলে গায়েব করে দেয় এবং উক্ত জমিতে আবার রোপনকৃত সরিষার ক্ষেত পাইপ দিয়ে পানি প্রবেশ করিয়ে প্লাবিত করে৷ যার কারনে আমার ক্ষেতের  বীজ নষ্ট হয়ে গেছে । বর্তমানে সোহেল রানা আশা বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি প্রদান করে আসছে। শুধু তাই নয় ইতিপূর্বেও আশার বিরুদ্ধে একাধিক জমি জালিয়াতির ঘটনা এলাকাবাসির মুখে শুনেছি। এলাকাবাসীরা আরও বলেছেন এই আশা জমি জালয়াতির একজন অন্যতম সক্রিয় সদস্য।

এমতাবস্থায় আমি কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। প্রশাসনের নিকট আমি সঠিক বিচারের দাবি জানাচ্ছি৷

এবিষয়ে অভিযুক্ত কাউন্সিলর সোহেল রানা আশার সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার ব্যবহৃত মুঠোফোন একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads