• শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪২৮

সারা দেশ

পুষ্টিবান সমৃদ্ধ জাতি গঠনে সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরি:বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক

  • ''
  • প্রকাশিত ১৬ মে ২০২৪

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মোঃ মহিউদ্দিন বলেছেন, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। সঠিক পরিমাণ ও সঠিক পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য খেতে না পারায় অপুষ্টির মূল কারণ। আমরা পুষ্টিহীন কাউকে দেখতে চাই না। খাদ্যের কথা ভাবলে পুষ্টির কথাও ভাবতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের পুষ্টি নিশ্চিত করার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আগামী ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জন ও ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে পুষ্টিবান সমৃদ্ধ জাতি গঠনে সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। এ বিষয়টি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। সুস্থ থাকতে হলে প্রত্যেককে পুষ্টি সমৃদ্ধ ও আয়োডিনযুক্ত খাবার খেতে হবে। খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে ডিম, দুধ, ফলমূল, শাক-সব্জি ও ডাল জাতীয় শস্য গ্রহণের মাত্রা বাড়াতে হবে। পুষ্টি বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। আজ ১৬ মে ২০২৪ ইংরেজি বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর জিইসি মোড়স্থ ‘দি পেনিনসুলা’ হোটেলের ডালিয়া হলে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি পরিকল্পনা (২০১৬-২০২৫) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভাগীয় বহুখাত ভিত্তিক রিসোর্স দলের (ডিএমআরটি) সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এডাপ্টিং এ মাল্টিসেক্টরাল এপ্রোচ নিউট্রিশন (আমান) প্রজেক্টের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সভার আয়োজন করেন।

সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, একটি শিশু জন্মগ্রহণের সাথে সাথে মায়ের বুকের শাল দুধ দিতে হবে। শিশুর জন্মের দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাািশ পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। পুষ্টির অভাবে একজন শিশু প্রতিবন্ধী বা বিকলাঙ্গ হতে পারে। পুষ্টি নিয়ে সর্বত্র সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। শিশুকে কিভাবে লালন পালন করতে হবে তা সবার আগে জানতে হবে মাকে। একজন প্রশিক্ষিত মা-ই পারে একটি শিশুকে সুন্দর করে লালন পালন করতে। আরেকটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, মাদক থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। কারণ আপনি যতই মাদক গ্রহণ করবেন, দিনশেষে ভুক্তভোগী হবে আপনার পরিবার। তাছাড়া কোনো পুষ্টি কাজে লাগবে না আপনি যদি মাদকসেবী হন। চট্টগ্রাম বিভিগের সার্বিক পুষ্টির চিত্র উন্নয়নে স্বাস্থ্য বিভাগসহ অন্যান্য সকল সরকারি বিভাগ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাকে একযোগে কাজ করতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালেই পুষ্টি নিয়ে চিন্তা করেছিলেন। এই লক্ষ্যে ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন গঠন করা হয়। ১৯৭৫ সালে গঠন করা হয় জাতীয় পুষ্টি পরিষদ। এমনকি ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানের ১৮ (১) অনুচ্ছেদেও পুষ্টি বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তিনি। তাই বহুখাতভিত্তিক পুষ্টির নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।

বর্তমান সরকার পুষ্টির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ (বিএনএনসি) ২২টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করে, যেগুলো পুষ্টি কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। গর্ভবতী নারীদের পুষ্টি ও মনো-সামাজিক বিকাশের দিকে নজর দিতে হবে। এর মাধ্যমে শিশুদের মস্তিষ্কের সার্বিক গঠন নিশ্চিত করা যাবে। আমরা সরকারি-বেসরকারি খাতসহ সুশীল সমাজের সঙ্গে কাজ করছি যেন সব মানুষের খাদ্যব্যবস্থার মধ্যে নিরাপদ ও পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য গ্রহণের নিশ্চয়তা অর্জিত হয়। এ জন্য আমরা ভোক্তার দিকেও নজর দিচ্ছি। কেননা, দুর্বল বা পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণহীন খাদ্যাভ্যাস কেবল ব্যক্তির সীমিত আয়ের কারণেই গড়ে ওঠে না। এ ব্যাপারে ব্যক্তির অজ্ঞানতা বা অসচেতনতাও অনেকাংশে দায়ী। পাশাপাশি বাল্যবিবাহ রোধে সর্বত্র জনমত সৃষ্টি করতে হবে।

বক্তারা বলেন, পুষ্টিবান জাতি গঠনে আমাদেরকে অনেক কাজ করতে হবে। খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে ভোক্তাদের এমনভাবে সমন্বয় ঘটাতে হবে যেন নিরাপদ ও মানসম্পন্ন খাদ্য সবার জন্য সুলভ করা যায়। সকলের সমন্বিত উদ্যোগে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা গেলে পুষ্টিবান জাতি গঠন সম্ভব। দূষিত পানি বা দুর্বল স্যানিটেশন ব্যবস্থা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা তৈরি করে। এসবের প্রভাব একজন ব্যক্তির ওপর দীর্ঘমেয়াদি। নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করা না গেলে ক্যান্সারসহ জটিল রোগীর সংখ্যা বাড়বে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মোঃ মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওসিএস ডা. মোহাম্মদ নওশাদ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. সুমন বড়–য়া। সভায় রিসোর্স পারসন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের (বিএনএনসি) মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান, পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ আজম, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) শাহিনা সুলতানা, প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরিচালক একেএম হুমায়ুন কবির, বিএনএনসি’র পরিচালক ডা. তাহেরুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. গাজী গোলাম মওলা ও এডাপ্টিং এ মাল্টিসেক্টরাল এপ্রোচ নিউট্রিশন (আমান) প্রজেক্টের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম।

সভার নির্ধারিত বিভিন্ন সেশনে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ ও দ্বিতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা (২০১৬-২০২৫) বিষয়ক উপস্থাপনা, বাংলাদেশের বর্তমান পুষ্টি পরিস্থিতি, পুষ্টি নীতি ও কৌশল, বহুখাত ভিত্তিক পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন বিএনএনসি’র উপ-পরিচালক ডা. জেহান আখতার রানা, উপ-পরিচালক ডা. নুসরাত জাহান, উপ-পরিচালক ডা. আকতার ইমাম ও উপ-পরিচালক ডা. ফারজানা রহমান। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন রাঙাগামাটি জেলা সিভিল সার্জন ডা. নুয়েন খীসা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা প্রকৌশলী গোলাম মোরশেদ ও মহিলা বিষয়ক উপ-পরিচালক মাধবী বড়–য়া প্রমুখ। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের এডিসি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়, সিভিল সার্জন কার্যালয়, পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ, খাদ্য অধিদপ্তর, সমাজসেবা, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, তথ্য অফিস, গণমাধ্যমকর্মী ও নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের আমান প্রকল্পসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ সভায় অংশ নেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads