আইনি জটিলতায় আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অর্ধশতাধিক হেভিওয়েট নেতা। এ ছাড়া নিজের পছন্দের জায়গায় মনোনয়ন না পাওয়ায় মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন গত বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেননি বিএনপির তিন হেভিওয়েট প্রার্থী। তবে নিজেদের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আইনি জটিলতায় আটকে যাওয়া নেতারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদিন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আইনি জটিলতায় বিএনপির বেশ ক’জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় আইনি জটিলতা কাটাতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন দলের আইনজীবীরা। শেষ পর্যন্ত তারা লড়াই করে যাবেন বলেও জানান সুপ্রিম কোর্ট বারের এই সভাপতি।
যেসব নেতা আইনি জটিলতায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না সেসব আসনে বিএনপির প্র্রার্থী কারা হবেন জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এসব বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে। বিকল্প প্রার্থীর বেশিরভাগই তাদের স্বজন। আইনি জটিলতায় বাতিল হওয়ার আশঙ্কায় থাকা নেতাদের বেশিরভাগই বিএনপির। তবে আওয়ামী লীগের দু’জন ভিআইপি প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং সরকারদলীয় চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। তবে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আইনি জটিলতা কাটাতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা।
যশোর-২ আসনে বিএনপির মনোনয়নের চিঠি পাওয়া সাবিরা সুলতানা দুর্নীতির মামলায় তিন বছরের সাজা পেয়েছেন গত ১২ জুলাই। সেই সঙ্গে ১ কোটি ৭৮ হাজার ১৩৫ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের আদেশও এসেছে। তিনি উচ্চ আদালতে আবেদন করেন তার দণ্ড স্থগিতের জন্য। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত তার দণ্ড স্থগিত করে রায় দেন। এতে তার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। যদিও অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। এই রায়ের ফলে বিএনপি নেতাদের মনে আসার সঞ্চার হয়েছে। তারা আশা করছেন এই রায়ের ফলে কারাবন্দি খালেদা জিয়াসহ অন্যরা তাদের দণ্ড স্থগিত করে নির্বাচন করতে পারবেন। এর আগে গত বুধবার হাইকোর্টের আপিল বিভাগ এক সিদ্ধান্তে জানায় দুই বছরের বেশি দণ্ড স্থগিত করাতে না পারলে ভোটে আসা যাবে না।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টির আইনগত দিক তারা পর্যালোচনা করে দেখবেন। এখন দেখা যাক নির্বাচন কমিশন জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করে কি না। তারপর তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
এদিকে বিএনপিদলীয় একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপাারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তার জন্য দলের পক্ষ থেকে তিনটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি মামলায় দুই বছরের বেশি সাজা হওয়ায় তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। একই কারণে নির্বাচন করতে পারবেন না বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমান উল্লাহ আমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. মশিউর রহমান, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. আবদুল ওহাব। এ অবস্থায় এসব আসনে বিকল্প প্রার্থী রেখেছে বিএনপি।
এদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন গতকাল একটি মামলায় নরসিংদীর আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আদালত জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। একই দিনে মাগুরা-১ (মাগুড়া-শ্রীপুর) আসনে বিএনপিদলীয় প্রার্থী মনোয়ার হোসেন খান একটি মামলায় জামিন নিতে গেলে আদালত তারও জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান। এ অবস্থায় তারা নির্বাচন করতে পারবেন কি না জানতে চাইলে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, কারাগারে পাঠানোর কারণে তাদের বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তাদের জামিন নিতে আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। আইনজীবীরা শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
এর বাইরে ঝুঁকিতে আছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনের বিরুদ্ধে সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল না করার মামলায় সাজা থাকায়। আদালতে গেলে তাদেরকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠাতে পারেন আদালত।
একইভাবে সাজা হওয়ায় আরো বিএনপির যেসব নেতা মনোনয়ন বাতিলের ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা হলেন— এম মোরশেদ খান, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, ভারতে অবস্থানরত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মীর মো. নাসির উদ্দিন প্রমুখ।