দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নতুন উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতার জন্য ২০১৭ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সহায়তায় ‘আইটি ইনকিউবেটর’ নামে একটি কর্মসূচি চালু করে মোবাইল অপারেটর বাংলালিংক। সম্ভাবনাময় স্টার্টআপগুলোকে অফিস স্পেস, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য উপকরণের মাধ্যমে ব্যবসায়িকভাবে সফল হতে সহায়তা করাই এ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য।
এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করা হয়েছিল এ প্রতিযোগিতা যেখানে অংশ নিয়েছিল দুই শতাধিক স্টার্টআপ। এর মধ্য থেকে একাধিক ধাপে যাচাই-বাছাই শেষে নির্বাচিত করা হয়েছে সেরা ছয়টি স্টার্টআপকে। স্টার্টআপগুলো হলো- জিনি আইওটি, ছবির বাক্স, হোমফুডজ.কো, পার্কলি, টিচ ইট এবং ইজি সেন্স।
নির্বাচিত স্টার্টআপগুলোর বিস্তারিত থাকছে আজ-
জিনি আইওটি
বিভিন্ন কাজ আরো সহজ এবং গতিশীল করতে বর্তমানে সবকিছুতেই অটোমেশনের ছোঁয়া লাগছে। তবে অটোমেশনের জন্য প্রয়োজনীয় স্মার্ট অ্যাপ্লায়েন্স এবং পুরো প্রক্রিয়াটি বেশ ব্যয়সাধ্য প্রক্রিয়া। এ সমস্যা সমাধানে কাজ করছে জিনি আইওটি। প্রতিষ্ঠানটি অটোমেশনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি তৈরি করছে যা পাওয়া যাবে সাশ্রয়ী দামে। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, তাদের উদ্ভাবিত ডিভাইস ব্যবহার করে সাধারণ সব অ্যাপ্লায়েন্সকে স্মার্ট অ্যাপ্লায়েন্সে রূপান্তর করা যাবে। রূপান্তরিত স্মার্ট অ্যাপ্লায়েন্সগুলো আবার তাদের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে পারস্পরিকভাবে যুক্ত থাকবে। তাদের উদ্ভাবিত এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির নাম দেওয়া হয়েছে ‘আশা’।
ছবির বাক্স
ফটোগ্রাফারদের তোলা বিভিন্ন ছবি বিক্রির জন্য বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মার্কেট প্লেস রয়েছে। এসব মার্কেট প্লেসে তারা নিজেদের তোলা ছবি খুব সহজেই বিক্রির সুযোগ পেয়ে থাকেন। দেশীয়ভাবে এ সুযোগটি তৈরি করে দিতে কাজ করছে ছবির বাক্স। অর্থাৎ ছবি বিক্রির জন্য এটি একটি দেশীয় মার্কেট প্লেস। এখানে নিজের তোলা স্টক ছবি বিক্রি করা যাবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে মার্কেটিং এবং ব্র্যান্ডিং এজেন্সিগুলো এখান থেকে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ছবি কিনে নিতে পারবে। ফটোগ্রাফার এবং এজেন্সিগুলোর মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে প্ল্যাটফর্মটি।
হোমফুডজ.কো
বাসায় তৈরি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার অফিস কিংবা বাসাবাড়ির ভোক্তাদের কাছে সহজে পৌঁছে দিতে কাজ করবে হোমফুডজ.কো নামের এ প্ল্যাটফর্মটি। এই অ্যাপের মাধ্যমে ভোক্তারা তাদের অবস্থানের ভিত্তিতে নিকটবর্তী হোমমেড খাবার তৈরি করে এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে খাবার অর্ডার করতে পারবেন। অন্যদিকে যারা খাবার তৈরি করতে ভালোবাসেন এবং মজার মজার রান্না করতে পারেন, তারাও এখান থেকে বাড়তি আয়ের সুযোগ পাবেন।
পার্কলি
রাজধানী ঢাকার বড় একটি সমস্যা হলো যানজট। যেখানে সেখানে অপরিকল্পিত পার্কিং এর অন্যতম বড় একটি কারণ। মূলত প্রয়োজনীয় পার্কিং স্পেসের অভাবেই যত্রতত্র পার্কিং দেখা যায়। অন্যদিকে বাসাবাড়িতে থাকা পার্কিং স্পেস দিনের একটি বড় সময় ধরেই ফাঁকা পড়ে থাকে। গাড়ি মালিক এবং পার্কিং স্পেস মালিকদের মধ্যে একটি যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে পার্কিং সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করছেন পার্কলির উদ্যোক্তারা। এ অ্যাপটির মাধ্যমে গাড়ি মালিক একটি নির্দিষ্ট স্থানের আশপাশে কোথায় ফাঁকা পার্কিং স্পেস রয়েছে সেটি খুঁজে বের করতে পারবেন এবং পার্কিংয়ের সুযোগ পাবেন। এর বিনিময়ে তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জ প্রদান করতে হবে। এতে করে গাড়ি যেমন থাকবে সুরক্ষিত তেমনি পার্কিং স্পেস ভাড়া দিয়ে বাড়তি আয় করতে পারবেন স্পেসের মালিক। যেখানে-সেখানে পার্কিং না করায় যানজট কমাতেও ভূমিকা রাখবে প্ল্যাটফর্মটি।
টিচ ইট
ই-লার্নিং বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় একটি বিষয়। বিভিন্ন ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ঘরে বসেই বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব। এমনই একটি প্ল্যাটফর্ম টিচ ইট। বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা রয়েছে, এমন যে কেউ এ প্ল্যাটফর্মটিতে শিক্ষামূলক কনটেন্ট তৈরি করতে পারবেন। এসব কনটেন্টের জন্য তাদের রয়্যালটি প্রদান করতে টিচ ইট। প্রতিমাসে নির্ধারিত ফি দিয়ে শিক্ষার্থী কিংবা আগ্রহী যে কেউ এসব কনটেন্টের মাধ্যমে নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পাবেন। এ প্ল্যাটফর্মটিতে দেশীয় শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে বাংলা কনটেন্টের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে এই প্ল্যাটফর্মটিকে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলা যেতে পারে।
ইজি সেন্স
বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটির ব্যবহার বাড়ছে। এ নিয়ে কাজ করবে ইজি সেন্স। এর মাধ্যমে এসব কারখানাকে কর্মীদের জন্য আরো নিরাপদ, স্মার্ট এবং কর্মীবান্ধব করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন এর উদ্যোক্তারা।