রাজধানীর পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটের মুন সিনেমা হলের মালিককে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য সরকারকে আরো দুই মাস সময় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আগামী ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে মুন সিনেমা হলের মালিক ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডকে এ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
মুন সিনেমা হলের মালিকানা ফেরতে নির্দেশনা চেয়ে করা রিটে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হয়েছিল। আপিল বিভাগে এ রায় বহাল থাকার পর সরকার সংবিধান সংশোধনও করেছে। কিন্তু সিনেমা হলের জমি ফেরত পায়নি ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড।
গতকাল সোমবার মালিকানা ফেরতের আদালত অবমাননা মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। আদালতে সরকারপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তিন মাস সময় চাইলে আদালত দুই মাস সময় দেন।
শুনানিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক চিঠির বরাতে অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, সংশোধিত বাজেট থেকে ওই অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, মুন সিনেমা হল ও এর সম্পত্তির মূল্য বাবদ ৯৯ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪ টাকা ২৭ পয়সা পরিশোধের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘মুন সিনেমা হলের মামলা শুনতে শুনতে আমরা (বিচারপতিরা) ক্লান্ত। আর কত দিন এভাবে ঘুরাবেন?’ এরপর আদালত অর্থ পরিশোধে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে পরদিন পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
আদালতে সরকারপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক। মুন সিনেমা হলের মালিকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি ও সাইফুল্লাহ মামুন। এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি মুন সিনেমা হলের মালিককে তিন কিস্তিতে ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। তখনকার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। নির্দেশ অনুসারে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে তিন কিস্তিতে এ টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। এর মধ্যে মুন সিনেমা হলের মালিক ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডকে দুই মাসের মধ্যে প্রথম কিস্তিতে ২৫ কোটি টাকা, পরের দুই মাসের মধ্যে আরো ২৫ কোটি এবং বাকি টাকা ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে দিতে বলা হয়। পরে গত ১ জুলাই আপিল বিভাগ সময় বাড়ান।
আলোচিত মুন সিনেমা হলের মালিকানা ফিরে পেতে ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে। কারণ সামরিক ফরমানে জারি করা পরিপত্রে মুন সিনেমা হলের জমি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে শিল্প মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়। শিল্প মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দেয় মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেন। পরবর্তী সময়ে আপিল ও রিভিউতেও এই রায় বহাল থাকে। ফলে ইটালিয়ান মার্বেল কোম্পানির মুন সিনেমা হলের মালিকানা ফিরে পাওয়ার পথ সুগম হয়। এরই মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের নামে বরাদ্দ করা জমিতে মুন সিনেমা হল ভেঙে বহুতল মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৫ জানুয়ারি মুন সিনেমা হলের জমি এবং তার ওপর গড়ে তোলা বর্তমান স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনে জমির মূল্য উল্লেখ করা হয় ৯৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা।