• শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪২৮
বহু প্রতীক্ষিত রায় আজ

২০০৪ সালের একুশে আগস্টে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় নৃশংস গ্রেনেড হামলার দৃশ্য

সংরক্ষিত ছবি

আইন-আদালত

বহু প্রতীক্ষিত রায় আজ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১০ অক্টোবর ২০১৮

বিএনপি-জামায়াতের শাসনামল ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় নৃশংস গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা ও বিস্ফোরক মামলার রায় ঘোষণা হবে আজ। আর এর মধ্য দিয়ে ১৪ বছরের প্রতীক্ষার অবসান হচ্ছে। যুক্তিতর্কের শুনানিতে প্রসিকিউশন (সরকারপক্ষ) আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আর্জি জানিয়েছে। আর আসামিপক্ষ জানিয়েছে বেকসুর খালাসের আর্জি।

আজ বুধবার পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করবেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর দীর্ঘ ১১৯ কার্যদিবস যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এ দিন ধার্য করেন আদালত। এর মধ্যে প্রসিকিউশন নিয়েছে ২৯ দিন আর আসামিপক্ষ ৯০ কার্যদিবস। আসামিপক্ষে গত ৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী এসএম শাহজাহান আইনি যুক্তি শেষ করেন। এরপর গত ৫, ১০, ১১, ১২, ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর প্রসিকিউশন যুক্তি উপস্থাপন করে।

মামলায় যেসব ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তার পর্যালোচনায় দেখা যায়, দুটি মামলায় দণ্ডবিধির ১২০-এর বি৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৩০২, ১০৯ ও ৩৪ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩, ৪ ও ৬ ধারায় অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মানুষ হত্যার অভিযোগে এবং ১২০-এর বি ধারায় হত্যার অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং সর্বনিম্ন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। অন্যদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩ ধারায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে প্রাণহানির অভিযোগে এবং ৬ ধারায় অর্থ, পরামর্শ ও বিস্ফোরক দিয়ে সহায়তার অভিযোগে একই দণ্ডের বিধান রয়েছে। দণ্ডবিধি আইনের ৩০২ ও ১২০-এর বি ধারায় এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩ ও ৬ ধারায় তারেক রহমানসহ ৩৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও সর্বনিম্ন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় হতে পারে।

রায়ের দিন ধার্য করার আগে আদালত বলেছিলেন, ‘দীর্ঘদিন পর এ মামলার বিচারের শেষ দিকে আমরা এসেছি। এ মামলার বিচারে কোনো ফাঁক রাখার চেষ্টা করিনি। কখনো কারো অধিকার বঞ্চিত করিনি। বিচারকাজ আজ শেষ হচ্ছে। আমাকে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে।’

আদালত বলেন, ‘এত দিন ধরে এখানে বিচারকাজ পরিচালনা করে এ আদালত বড় আপন হয়ে গেছে। এ আদালতের জানালা, ফ্যান, সবকিছু বড় চেনা। আর এক দিন এখানে আসতে হবে। সেদিন আমি রায় ঘোষণা করব। এ মামলায় আসামিরা, তাদের আইনজীবী, গণমাধ্যম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যরা যে সহযোগিতা করেছেন তা হূদয় দিয়ে অনুভব করছি। সুপ্রিম কোর্টের অনেক বিশিষ্ট আইনজীবী এ মামলা পরিচালনায় এ বিচারিক আদালতকে অলংকৃত করেছেন। বিচারক সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এ মামলায় সম্পূর্ণ ঘটনাকে সামনে এনে আইনি ব্যাখ্যার আলোকে রায় ও আদেশ দেওয়া হবে।’

আসামিদের জামিন বাতিলের ব্যাপারে আদালত বলেন, ‘আসামিরা জামিনে থাকলে বিচারে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য জামিন বাতিল করা হলো।’

প্রসিকিউশন পক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। আশা করি সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করার জন্য চালানো ২১ আগস্ট হামলা ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস ও বর্বরোচিত। নিরস্ত্র মানুষের ওপর আর্জেস গ্রেনেডের মতো সমরাস্ত্র ব্যবহারের নজির এ উপমহাদেশে আর নেই। তারা এ হামলার সাফল্যের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল।

মামলায় মোট আসামি ৪৯ জন। তাদের মধ্যে ৩১ জন কারাগারে রয়েছেন। ১৮ জন পলাতক।

জামিন বাতিল হওয়া ৮ আসামি হলেন- বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, পুলিশের সাবেক আইজি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ, মামলার সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (অব.) রুহুল আমিন, এএসপি (অব.) আবদুর রশিদ ও সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি (অব.) মুন্সী আতিকুর রহমান।

কারাগারে থাকা বাকি ২৩ আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, মুফতি হান্নানের ভাই মুহিবুল্লাহ মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডাক্তার জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শাহাদত উল্যাহ ওরফে জুয়েল, হোসাইন আহমেদ তামিম, মইনুদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, আরিফ হাসান সুমন, মো. রফিকুল ইসলাম সবুজ, মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন, হরকাতুল জিহাদ নেতা আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মাদ ওরফে জিএম, শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মিরি নাগরিক আবদুল মাজেদ ভাট, আবদুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, সামরিক গোয়েন্দা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম।

পলাতক ১৮ আসামি হলেন- বিএনপির বর্তমান চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার তখনকার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, সবেক ডিসি পূর্ব মো. ওবায়দুর রহমান, সবেক ডিসি দক্ষিণ খান সাইদ হাসান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, শফিকুর রহমান, আবদুল হাই ও বাবু ওরফে বাটুল বাবু।

বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে দলটির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। গুরুতর আহত হন তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ কয়েকশ নেতাকর্মী।

গ্রেনেড হামলার পর ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফ ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা (নং-৯৭) দায়ের করেন। আওয়ামী লীগের তখনকার সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক দুটি এজাহার দায়ের করেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads