বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও আইনজীবীদের বিরুদ্ধে গত সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে দায়ের করা প্রায় চার হাজার মামলার তদন্তে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিশন গঠনের নির্দেশনার রিটে বিভক্ত আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ জারি করলেও কনিষ্ঠ বিচারপতি রিট আবেদনটি খারিজ করে দেন। ফলে রিট আবেদনটি এখন নিয়ম অনুসারে প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে।
গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদশ দেন। জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশসহ রুল জারি করেন। অপর বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল রিট খারিজ করে আদেশ দেন।
জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী আদেশে পুলিশের আইজিকে গায়েবি ও কাল্পনিক মামলাগুলো তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে এসব (গায়েবি) মামলার তদন্তে তদন্ত কমিটি গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তার কারণ জানতে রুল জারি করেন। এছাড়া মামলা যারা দায়ের করেছে তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সে বিষয়ে জানাতেও রুল জারি করেন। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়ে আগামী ১৭ ডিসেম্বর এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করেন।
অপরদিকে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল রিট আবেদন খারিজ করে বলেন, এ আবেদন সংবিধানসম্মত হয়নি। তাই প্রত্যাখ্যান করা হলো।
গতকাল রিটের শুনানিতে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, দেশের লাখ লাখ মানুষকে এই ধরনের গায়েবি মামলার আসামি করা হয়েছে। আমরা এই মামলা বাতিল ও রুল জারির আর্জি পেশ করছি। এসব গায়েবি মামলাকারীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সেই নির্দেশনা চাচ্ছি। আমরা স্বাধীন তদন্ত কমিটি চাই। এরপর বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল জানতে চান এটা জনস্বার্থে মামলা কি না? জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এটা জনস্বার্থের মামলা।
আদালত বলেন, আমরা সাংবিধানিক আদালত, আইন ও সংবিধান মোতাবেক যে আদেশ পাওয়ার কথা সেভাবে আবেদন করতে হবে। আদালত আরো বলেন, ফৌজদারি মামলা মিথ্যা অভিযোগে করা হয়েছে এটা কীভাবে বলা যাবে?
জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ১০ লাখ মানুষ কি এই আদালতে আসবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আসিনি। ১০ লাখ লোক আসামি, এজন্য জনস্বার্থে আবেদন করা হয়েছে। এরপর আদালত বলেন, আমরা কি পত্রিকা দেখে আদেশ দেব?
শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদন পড়ে বলেন, এসব মামলায় মৃত ব্যক্তি এবং বিদেশে অবস্থানকারী ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ১০ মাসের শিশুর বিরুদ্ধে মামলা করারও নজির রয়েছে। তারা বলছে- ঘটনা ঘটেনি, মৃত ও বিদেশে অবস্থানকারী ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
আদেশের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন মওদুদ আহমদ, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সুব্রত চৌধুরী, ফজলুর রহমান, কায়সার কামাল, আইয়ুব আলী আশ্রাফী, মাসুদ রানা, এ কে খান প্রমুখ।
গত ২২ সেপ্টেম্বর সারা দেশে ১ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন থানায় বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৩ হাজার ৭৩৬টি মামলা দায়ের করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব মামলায় আসামি করা হয় ৩ লাখ ১৩ হাজার ১৩০ জনকে।
পরদিন ২৩ সেপ্টেম্বর এসব মামলা ‘গায়েবি ও কাল্পনিক’ দাবি করে তদন্তে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী ও সানাউল্লাহ মিয়া।
এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় আবেদনকারীসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পরবর্তী সময়ে এ ধরনের মামলা দায়ের থেকে বিরত থাকতে, তদন্ত বন্ধ রাখতে এবং এ ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা জারির আবেদন করা হয়। কমিটিতে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের প্রতিনিধি রাখার নির্দেশনা চাওয়া হয়।