প্রাকৃতিক দুর্যোগে সম্ভাব্য খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় ঘরে ঘরে খাদ্যের আপৎকালীন মজুত গড়তে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পারিবারিক সাইলো বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যটা যেন থাকে, যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে খাদ্য মজুতটা যেন নিশ্চিত থাকে। যাতে কোনোমতেই আমরা খাদ্য ঘাটতিতে না পড়ি কখনো। আজকে যে উদ্যোগটা নেওয়া হয়েছে, আমি মনে করি যুগান্তকারী উদ্যোগ। কারণ প্রত্যেকটা পরিবার যেন একটা আপৎকালীন মজুত রাখতে পারে সেই ব্যবস্থাটা নেওয়া উচিত।’
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নাধীন আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার প্রকল্পের আওতায় দেশের দুর্যোগপ্রবণ ১৯টি জেলার ৬৩ উপজেলার পাঁচ লাখ মানুষকে পারিবারিক সাইলো দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঝালকাঠির তিনটি পরিবারের মাধ্যমে সাইলো বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ৫৬ কেজি চাল ধারণক্ষমতার পারিবারিক এ সাইলোর নির্মাণমূল্য ১ হাজার ৩৭৭ টাকা হলেও এটি বিতরণ করা হচ্ছে ৮০ টাকা মূল্যে। বাতাস ও পানিরোধক হওয়ায় দুর্যোগের সময় এই সাইলোর মধ্যে শুকনো খাবার রাখলেও তা নষ্ট হবে না। বীজও সংরক্ষণ করা যাবে এতে।
সাইলো উদ্বোধন করতে গিয়ে শেখ হাসিনা একসময় দেশের অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা মানুষদের দুর্দশার কথা তুলে করেন। তবে সেই অবস্থা কাটিয়ে তার নেতৃত্বাধীন প্রথম সরকারের (১৯৯৬-২০০১) সময় দেশকে ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ’ করার কথাও তুলে ধরেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সারের দাম কমানো ও ভর্তুকি দেওয়া, কৃষকদের ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দেওয়া, কৃষি উপকরণ কার্ড বিতরণসহ তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরেন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে খাদ্য উৎপাদন প্রধান অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগের সঙ্গে ওইসব অঞ্চলে আধুনিক চালকলসহ খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ার ওপরও জোর দেন তিনি।
শিক্ষিতদের কৃষিকাজে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কৃষিকাজটাকে যান্ত্রিকীকরণ করতে হবে। যেহেতু আমরা এখন শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। আর শিক্ষিত হয়ে গেলে অনেকে আবার ক্ষেতে নামতে চায় না। আমি কয়েকদিন আগেই একটা চিন্তা করছিলাম যে, আমাদের একটা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সেটা হলো, প্রত্যেক স্কুল-কলেজের ছাত্রদের, বিশেষ করে, কলেজছাত্রদের যখন ধান তোলার সময় তাদেরকে নামানো যে, এই ধান কাটা... এর সঙ্গে তাদের একটা সম্পৃক্ততা রাখা।’ কেউ যেন কৃষিকাজবিমুখ না হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষিত হয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরো ভালোভাবে যেন কৃষিকাজ করতে পারে, বাপ-মার কাজে সাহায্য করতে পারে সেভাবেই তাদের মানসিকতাটা গড়ে তুলতে হবে। সেভাবেই শিক্ষার সঙ্গে থাকা উচিত। সঙ্গে সঙ্গে শিল্পায়নও আমরা করব। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় ভিডিও কনফারেন্সে গণভবনে উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে ঝালকাঠির প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বিডিনিউজ।