একেবারে সস্তা চালের বস্তা। মাত্র ১ হাজার ৭০ টাকা ৫০ কেজির বস্তা। মানে ভালো, দামে কম, ওজনেও ঘাটতি নেই- এসব কথা বলে গ্রামের পাড়ায় ও হাট-বাজারে মাইকিং করে প্রতিবস্তা চাল ১ হাজার ৭০ টাকায় বিক্রি করছেন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা। দামে কম পেয়ে এসব চাল কিনছেন নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। আর গবাদিপশুর জন্য এই চাল কিনছেন এলাকার বিত্তবানরা। রাজশাহীর বাঘায় তিন দিন ধরে এভাবে ভটভটি, পাওয়ার ট্রিলার, মিনি ট্রাক, উলকায় বোঝাই করে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রেতারা চালের নাম বলছেন ‘তামরি’ চাল।
গত শুক্রবার চকরপাড়া বাউসা গ্রামে পাওয়ার টলিতে চাল বোঝাই করে বিক্রি করছিলেন ফারুক নামের ভ্রাম্যমাণ এক বিক্রেতা। তিনি তিন দিন ধরে চাল বিক্রি করছেন। ফারুক জানান, যে চাল বিক্রি করছেন, তা দেখতে লালচে ধরনের। অটোমিল থেকে তৈরি এ চালের নাম ‘তামরি’। বেশ কিছুদিন আগে এই চাল বাজারে বিক্রি হয়েছে, ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। তার দাবি, বাজারে নতুন চাল আমদানি হলে, এ চালের চাহিদা আরো কমে যাবে।
বাঘা বাজারের আলহাজ নুরুজ্জামান সুপার মার্কেটে মাইকিং করে একই ধরনের চাল বিক্রি করছিলেন, ওই আড়তের স্বত্বাধিকারী প্রভাষক নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা চাল বিক্রি করছেন ১ হাজার ৭০ টাকা করে। তিনি দাবি করেন, এই চালের মান ভালো। এ চালের ভাত খেয়ে কারো কোনো ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে প্রভাষক নবাব আলী জানান, তিনি দুই বস্তা চাল কিনেছেন। রান্না করে অন্য চালের মতো ভাতের স্বাদ পাননি। তাই নিজেরা এই চাল খাচ্ছেন না। গরু-ছাগলের খাবার হিসেবে ব্যবহার করছেন। তবে এর আগে বাজারে এই দামে কোনো চাল পাওয়া যায়নি। দিঘা গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই চাল রান্না করে ভাত খাচ্ছেন। ভেতরে একটা আঠা আঠা ভাব। আর এই চালের ভাত তুষ তুষ মনে হচ্ছে। বাজুবাঘা গ্রামের বাসিন্দা সাজেদুল হক বলেন, গ্রামের দরিদ্র মানুষ কয়েক দিন ধরে এই চালের ভাত খাচ্ছেন। এত কম দামে কীভাবে এই চাল দিচ্ছেন, জানতে চাইলে সাব্বির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবদুস সাত্তার বলেন, কুষ্টিয়ার অনেক আড়তে এ ধরনের চাল মজুত রয়েছে। সেখানকার আড়ত থেকে তিনি চাল কিনে এনে বিক্রি করছেন।
বিক্রি করা কয়েকটি চালের বস্তার গায়ে লেখা রয়েছে, মেসার্স সাথী এন্টারপ্রাইজ, সাথী স্পেশাল, মার্কা, গোলাপফুল, কুষ্টিয়া, মহিদুল এগ্রোফুড, কাটা চাল, চিংড়ি মার্কা খাজানগর, জগতি, কুষ্টিয়া।
এদিকে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে এই চাল নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। কেউ বলছেন, কৃত্রিম চাল, কেউ বলছেন চোরাই, কেউ বলছেন এই চাল খেলে বিপদ হতে পারে। এই চালের কোনো ক্ষতিকারক দিক আছে কি না, কোথা থেকে আসছে, জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। তবে লাইসেন্সধারী ডিলার ছাড়া যে কেউ চাল বিক্রি করতে পারবেন না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।