সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন। পল্লী অঞ্চল ও দুর্গম এলাকার প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে সরকার। ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর লক্ষ্য পূরণ করতে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। এ লক্ষ্য পূরণের আগেই সহিংসতায় পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য বিদ্যুতের ব্যবস্থা করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ১০৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরে একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিতব্য একনেক বৈঠকে রোহিঙ্গাদের কল্যাণে মোট তিনটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিদ্যুতের ব্যবস্থা ছাড়াও ক্যাম্পে প্রবেশের রাস্তা, দুর্যোগ মোকাবেলায় বহুতল আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, খাবার বিতরণ কেন্দ্র নির্মাণ, স্থানীয়দের জন্য উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামসড়ক সংস্কার করা হবে। পাহাড়ের প্রতিরক্ষা কাজ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্পমেয়াদে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ পরিবহন সহজ করতে সংস্কার করা হবে ৮১ কিলোমিটার সড়ক।
প্রস্তাবিত তিন প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে, ৮৬০ কোটি ৬ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে ১৪৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ৭১২ কোটি ২৬ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে। অনুদান হিসেবে তিন প্রকল্পে অর্থায়ন করবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। দুই ধাপে রোহিঙ্গাদের জন্য ২০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যেই প্রথম দফায় ১০ কোটি ডলার অনুদানের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে ৯ আগস্ট এডিবির অনুদান চুক্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে গত সপ্তাহে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষা প্রকল্পের সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এর আগে ভাষানচরে ১ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয় নিশ্চিত করতে অনুমোদন দেওয়া প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া জোরেশোরে শুরু না হওয়ায় তাদের জন্য স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে তাদের জন্য জরুরি ত্রাণ বাবদ সরকারের তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ৬০ কোটি টাকা।
অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা জরুরি সহায়তা (বিআরইবি অংশ) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৫০ কিলোমিটার বিদ্যুতের লাইন নির্মাণ, একটি উপকেন্দ্র নির্মাণ, গ্রিড ও সৌর বিদ্যুৎ মিলে ৬ হাজার স্ট্রিট লাইট স্থাপন, ২০০ বজ্র নিরোধক পোল স্থাপন, গৃহস্থালিতে ব্যবহারের জন্য সৌর বিদ্যুতের ৫০টি ন্যানো গ্রিড স্থাপন, ৭০ হাজার উন্নত চোলা এবং ট্রান্সফরমার ও ক্যাপাসিটরের ব্যবস্থা করা হবে।
বাংলাদেশ জরুরি সহায়তা (এলজিইডি অংশ) শীর্ষক প্রকল্পে ব্যয় হবে ২৯৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫০ কোটি ৯০ লাখ টাকা ও এডিবির অনুদান থেকে ২৪৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশের রাস্তা নির্মাণের লক্ষ্য সামনে রেখে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে এর কাজ শেষ করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় ৮১ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়নের মাধ্যমে শরণার্থীদের মধ্যে বিতরণের ত্রাণসামগ্রী পরিবহন সহজ করার পাশাপাশি যানবাহন চলাচল সহজ করার লক্ষ্য সামনে রেখে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যাবে কেরানীগঞ্জে : আজ একনেক বৈঠকে অনুমোদনের জন্য মোট ১৭ প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২৯ হাজার ৫০৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ব্যয়ের ১২ হাজার ৫৩১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা আসবে সরকারের তহবিল থেকে। ২ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা নিজেদের তহবিল থেকে ব্যয় করবে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো। আর প্রকল্প সহায়তা, অনুদান ও বাণিজ্যিক ঋণ বাবদ বিদেশি উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ১৩ হাজার ৯৯০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে প্রস্তাবিত প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এ অর্থ ব্যয় করে বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে।