• শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪২৮
সেন্টমার্টিন ইস্যুকে চাঙ্গা করে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করার অপচেষ্টা মিয়ানমারের

কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শনের একাংশ

ছবি : বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

সেন্টমার্টিন ইস্যুকে চাঙ্গা করে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করার অপচেষ্টা মিয়ানমারের

  • মাহমুদুল হক বাবুল, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১০ অক্টোবর ২০১৮

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও সেদেশের উগ্রপন্থী সশস্ত্র রাখাইন দুর্বৃত্তরা প্রায় ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা অধিবাসীকে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে। মানবতার মা খ্যাত জননেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মহানুভুবতার পরিচয় দিয়ে এসব রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ সব ধরনের মানবিক সেবা দিয়ে আসলেও রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যেতে মরিয়া। আন্তর্জাতিক বিশ্বের চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে যখন মিয়ানমার কোনঠাসা হয়ে পড়েছে ঠিক তখনি সেন্টমার্টিন দ্বীপকে মিয়ানমারের অংশ হিসাবে দাবী করে মানচিত্র সংশোধন করেছে। সেন্টমার্টিনের মতো বিরোধহীন একটি অবাস্তব ইস্যুকে চাঙ্গা করে রোহিঙ্গা নিপীড়ন ও জাতিগত নির্মূলের দায়ী থেকে মিয়ানমার কোনদিন রেহায় পাবে না। মঙ্গলবার কুতুপালং, বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার নেতার সাথে আলাপ করা হলে তারা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এসব কথা বলেন।

বালুখালী-১ এর হেডমাঝি লালু মাঝি (৪৫) তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, বিশ্বজনমত এখন রোহিঙ্গাদের পক্ষে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের ৫০ জন সাংবাদিক রোহিঙ্গাদের জীবন যাপনের বাস্তব চিত্র দেখে গেছেন। তারা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসব চিত্রসহ প্রতিবেদন চাপাতে পারে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বিশ্বের চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার কোনঠাসা হয়ে আবুল তাবুল কথা বলছে। তিনি ব্যঙ্গ করে বলেন, বেড়ালের ধমকে বাঘ কখনো ধেয়ে যায় না।

তাজনিমারখোলা ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ আলী (৩৫) জানান, এটি মিয়ানমারের একটি চক্রান্ত। যেহেতু একদিন না একদিন নাগরিক অধিকার দিয়ে রোহিঙ্গাদের অবশ্যই ফিরিয়ে নিতে হবে মিয়ানমারকে। তাই তারা রোহিঙ্গা সমস্যাকে ঘোলাটে করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার জন্য কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। সেন্টমার্টিনকে তারার দাবী করাটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও হাস্যকর দাবী করে ওই রোহিঙ্গা নেতা বলেন, রোহিঙ্গা নিপীড়ন ও জাতিগত নিধনের জন্য মিয়ানমারকে একদিন আন্তর্জাতিক কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। তা জেনে তারা প্রত্যাবাসন ইস্যুটিকে নৎসাত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে মিয়ানমার তাদের মানচিত্র সংশোধন করে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে তাদের দাবী করছে।

এ প্রসঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক উখিয়া বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, কোরাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন বা এর সাথে সংযুক্ত ছেড়া দ্বীপের মালিকানা দিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কোন বিরোধ থাকতে পারে না। বাংলাদেশের সমুদ্র সীমা নিয়ে যে বিরোধ ছিল সেটিও আন্তর্জাতিক আদালতে নিস্পত্তি হয়ে গেছে। আদালতের রায়ে দু’দেশের সমুদ্র সীমা স্পষ্ট করে দিয়েছে। এরপরও সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে নেপিডোর উস্কানি মূলক কাজের নৈপথ্যে কোন না কোন রহস্য লুকিয়ে আছে।

সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জানানো হয় মিয়ানমারের শ্রম অভিবাসন ও জনসংখ্যাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে দেয়া এ মানচিত্রে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপকে প্রতিবেশী দেশটি নিজেদের অংশ হিসাবে দাবী করছে। এব্যাপারে বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানানো হলো মিয়ানমার তাৎক্ষণিক ভাবে তাদের ওয়েব সাইটে দেয়া মানচিত্র সংশোধন করে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে বাদ দেওয়া হলেও বিষয়টি নিয়ে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হিসাবে উখিয়ায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads