• শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪২৮

জাতীয়

জ্বালানির উত্তাপ দ্রব্যমূল্যে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ নভেম্বর ২০২১

দীর্ঘদিন ধরে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী,  এরই মধ্যে হঠাৎ করে বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম। এতে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কায় দিন গুণছে সাধারণ মানুষ। কারণ, পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে পরিবহন, বাজারজাতকরণ সবকিছুর সঙ্গে রয়েছে জ্বালানি তেলের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ যোগ। ফলে জ্বালানি তেলের উত্তাপ পণ্যবাজারে লাগবে এটাই স্বাভাবিক।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা অঘোষিত ধর্মঘটে পরিবহনের অভাবে সবজি এবং নিত্যপণ্য সরবরাহ ব্যহত হওয়ায় বাড়ছে বিভিন্ন পণ্যের দাম। পরিবহন মালিকদের দাবি তেলের দাম বাড়ানোর সঙ্গে ভাড়া সমন্বয় করা উচিত ছিল। সাধারণ জনগণ উদ্বেগের মধ্যে সময় পার করছে, পরিণতি কোথায় গিয়ে ঠেকে সেদিকে লক্ষ রাখছেন। তেলের দাম কমে নাকি গাড়ি ভাড়া বেড়ে যায়। তারা তেলের দাম কমানোর জোর দাবি জানিয়েছেন।

করোনার ক্ষত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই জ্বালানি তেল ঘিরে সৃষ্ট সংকটে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন নিম্ন আয়ের মানুষ। সেইসঙ্গে মধ্যবিত্ত পরিবারেও নেমে এসেছে হাহাকার। কারণ, করোনায় অনেকেই পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন।  ব্যবসা প্রতিষ্ঠা বন্ধ হয়ে গেছে, পর্যটন কেন্দ্র ও রেস্টুরেন্ট সংশ্লিষ্ট অনেকেই এখনো বেকার রয়ে গেছে। অন্যদিকে, সরকার দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরতে পারছে না। এমন সময় ডিজেলের দাম বাড়িয়ে সরকার যেন অনেকটা আগুনে ঘি ঢালার ব্যবস্থা করেছে।

গত বুধবার মধ্যরাতে হঠাৎ করেই ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা হারে বাড়ানো হয়। ৬৫ টাকা লিটারের ডিজেল কিনতে এখন ৮০ টাকা করে গুণতে হচ্ছে। আর ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে অলিখিত আন্দোলনে নেমে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।

প্রতিবেশী দেশে পাচারের শঙ্কায় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির যুক্তিকে সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছে সচেতন মহল। তারা বলছেন, এটা জ্বালানি তেল এমন কোনো বস্তু নয় যে, চাইলে ব্যাগে ভরে পাচার করা যায়। যদি, সরকার পাচার রোধ করতে না পারে তাহলে এতো বিপুল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাখার প্রয়োজন কি? এমন প্রশ্নও তুলেছেন তারা। ডিজেলের নজিরবিহীন মূল্য বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় এমনই মন্তব্য করেছেন পাঠাও চালক আব্দুল কাদির। এক সময়ের উদ্যোক্তা আব্দুল কাদিরকে করোনা বাধ্য করেছে নতুন পেশায় আসতে। সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে ৩ বন্ধু মিলে একটি রেস্টুরেন্ট চালু করেছিলেন। করোনাকালে বন্ধ থাকায় ভাড়া পরিশোধ করতে না পেরে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। বলা চলে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে বেঁচেছেন। তিনি বলেন, সরকার জনগণের পালস বুঝতে পারছে না। অনেকেই নানামুখী সংকটের মধ্যে রয়েছে। পরিবহনের ওপর তাদের কোনোকালেই নিয়ন্ত্রণ ছিল না। এখন যে অরাজকতা শুরু হয়েছে রক্ষা পাবো কিভাবে। ঘোষণা ছাড়াই রাস্তায় গাড়ি নেই। বাজারে শীতের সব্জির অগ্নিমূল্য, কোনো কোনো সব্জির দাম ২শ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ট্রাক ভাড়া বেড়ে যাবে তখনওতো সব্জির মূল্য আরো বেড়ে যাবে। উৎসমুখে ১ টাকা বাড়লে সেই অজুহাতে আমরা দাম বাড়াই কয়েকগুণ। কে ঠেকাবে ট্রাক চালকদের। ভোজ্যতেলের দামও লাগাম ছাড়া।

তেমন একটি অবস্থায় ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, আবার একদিন পরেই এলপি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। পণ্য, পরিবহন সব কিছু নিয়ে মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ। বাজারে গেলে এই আরো বাড়ে। কারণ, ৫ শ টাকা দিয়ে কাঁচাবাজার করে বাসায় ফেরা যায় না।

বিক্রেতারা বলছেন, চড়াদামে শিকার তারাও। দিন শেষে তাদেরকেও সব্জি কিনতে হয়। আবার ব্যবসায় পুঁজি বেশি খাটাতে হচ্ছে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে সরকার গরিব দেখতে পারছে না। বাস চালক নজরুল ইসলাম বলেন, আমরাতো বাস চালাতে চাই। বসে থাকলেতো বেতন পাবো না, কিন্তু খরচ না উঠেলে কি করে চলবে। সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে, বাসের অগ্রিম আয়কর আড়াই হাজার থেকে বাড়িয়ে ৬ হাজার করা হয়েছে। চাকা, টায়ার-টিউব, মবিল ও অন্যান্য সকল যন্ত্রপাতির দাম বেড়েছে। পথে পুলিশের চাঁদাবাজি বেড়েছে। ১৫ বছর ধরে বাস চালাই কখনো একসঙ্গে এতো বেশি পরিমাণে তেলের দাম বাড়েনি। করোনার সময়ে কতোদিন গাড়ি বন্ধ ছিল, তখন আমরা কিভাবে চলেছি কেউ খোঁজ নেয় নি। এইতো কয়েক মাস আগেও ৩ মাসের মতো বাস বন্ধ ছিল, অনেকেই ঋণের দায়ে জর্জরিত। সে কথা চিন্তা না করে হঠাৎ তেলের দাম বাড়ানো হলো।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads