• শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪২৮

জাতীয়

দাপট কমছে রেমিট্যান্সের

চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবৃদ্ধি হয়নি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ নভেম্বর ২০২১

দেশে ১৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এসেছে গত অক্টোবর মাসে। এমন তথ্য দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অথচ গত বছরের অক্টোবরে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৮ দশমিক ০৫ শতাংশ। আর এই বছরের অক্টোবরে উল্টো নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। শুধু তাই নয়, ২০২০ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর এই চার মাসে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪৩ শতাংশের বেশি। অথচ এই অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই থেকে অক্টোবর) কোনো প্রবৃদ্ধি হয়নি।

দেশে ২০০০-২০২১ অর্থবছরের পুরোটা সময় তার আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০২০) চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। কিন্তু চলতি অর্থবছরে (২০২১-২০২২) ঠিক তার উল্টো দিকে ঘুরছে রেমিট্যান্সের চাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে হঠাৎ করেই রেমিট্যান্স প্রবাহে দাপট কমেছে। এরই ধারাবাহিকতা আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসেও দেখা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। এর আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫০ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলার। এরপর থেকে এত কম রেমিট্যান্স আসেনি। ১৭ মাস পর ফের রেমিট্যান্স এতটা কমেছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত চার মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। গত জুলাই থেকে অক্টোবর—এই চার মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৭০৫ কোটি ৫১ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময়ে পাঠিয়েছিলেন ৮৮১ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ, গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবাসী আয় কমেছে ১৭৬ কোটি ডলার। কেবল সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে রেমিট্যান্স কমেছে ৮ কোটি ডলার। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে দেশে ১৭২ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। আগস্টে এসেছে ১৮১ কোটি ডলার, যা জুলাইয়ের চেয়ে ৬  কোটি ১৪ লাখ ডলার কম। এর আগে চলতি বছরের জুলাইয়ে দেশে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে, যা তার আগের মাস জুনের চেয়ে ৬ কোটি ৯৩ লাখ ডলার কম।

এর আগে এক সংলাপে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ‘রেমিট্যান্সের যে জাদু সেটি সম্ভবত শেষ হতে চলেছে। কারণ, মানুষ বিদেশে গেছে কম, এসেছে বেশি। সরকারি প্রণোদনার কারণে হুন্ডি ছেড়ে মানুষ ব্যাংকিং খাতে টাকা পাঠিয়েছিল। এ অবস্থায় জাদু শেষ হয়ে যাচ্ছে কিনা সেটিই বোঝার বিষয়।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের জুলাইয়ে দেশে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা জুনের চেয়ে ৬ কোটি ৯৩ লাখ ডলার কম এবং আগের বছরের একই সময়ের (২০২০ সালের জুলাই) তুলনায় ২৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ কম। গত বছর জুলাইয়ে এসেছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, গত আগস্টে এসেছে ১৮১ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ কোটি ডলার কম। ২০২০ সালের আগস্টে এসেছিল ১৯৬ কোটি মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অক্টোবরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার  কম। ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ছিল ২১০ কোটি ২১ লাখ ডলার।

অবশ্য বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত মনে করেন, মহামারিতে যে হারে প্রবাসীরা চাকরি হারিয়েছেন, সেভাবে নতুন করে বিদেশে শ্রমিক নিয়োগ হয়নি। এতে আয় কমছে। এছাড়া মহামারির বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর হুন্ডিতে অর্থ লেনদেন বেড়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ, কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরো ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পাচ্ছেন সুবিধাভোগী।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads