অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) বন্ধের লক্ষ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সমন্বয়ে সংগঠিত অভিযানে দেশের বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের ১০ হাজার ৯৪৭টি সিম জব্দ করা হয়েছে। বেশিরভাগই করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নামে কেনা এসব অবৈধ ভিওআইপি সিমের মধ্যে ৪৬ শতাংশ রাষ্ট্র মালিকানাধীন টেলিকম অপারেটর টেলিটক এবং ৩৬ শতাংশ সিম আরেক মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের বলে জানানো হয়েছে।
জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকার মোহাম্মদপুর, আদাবর, বাড্ডা এবং উত্তরায় অবস্থিত ৬টি স্থাপনায় বিটিআরসি ও র্যাবের যৌথ অভিযানে এই সিম জব্দ করা হয়। এ সময় অবৈধ ভিওআইপি সংযোগে ব্যবহূত প্রায় ৩৭ লাখ টাকা মূল্যমানের বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ এবং ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
সোমবার বিটিআরসির সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক এই বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, এই অভিযানে মোবাইল অপারেটর টেলিটকের ৫ হাজার ৭৫টি, রবি ও এয়ারটেলর ৩ হাজার ৮৯৭টি, গ্রামীণফোনের ১ হাজার ৪১৪টি, বাংলালিংকের ৪২৬টি, পিএসটিএন অপারেটর র্যাংকসটেলের ১২০টি এবং ওয়াইম্যাক্স অপারেটর বাংলালায়নের ১৫টি সিম জব্দ করা হয়।
এ ছাড়া ভিওআইপি কাজে ব্যবহূত বিভিন্ন ধরনের সিমপোর্ট যেমন ৫১২, ২৫৬, ১২৮, ৩৬, ৩২, ২৪, ১৬ ও ৮ সিমপোর্ট বিশিষ্ট মোট ৭২টি জিএসএম (সিমবক্স) গেটওয়ে, ১৩০টি জিএসএম এন্টেনা, ৪৫টি রাউটার, ৫টি কম্পিউটার, ৫টি ল্যাপটপসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক মালামাল জব্দ করা হয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৩৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অভিযান শেষে এই অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানা, আদাবর থানা, বাড্ডা থানা এবং উত্তরা পশ্চিম থানায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০১ এর অধীনে ৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জহুরুল হক বলেন, ইন্টারন্যাশনাল কল টার্মিনেশন রেট বাড়লে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। আমাদের হিসাব বলছে প্রতিদিন দেশে আড়াই কোটি মিনিট ভিআইওআপির মাধ্যমে কল আদান-প্রদান হয়। তবে এই হিসাবটা কমবেশি হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা, অভিযানে সম্পৃক্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানে সংশ্লিষ্ট আইজিডব্লিউ অপারেটরস ফোরাম (আইওএফ) ও বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অবৈধ ভিওআইপি ধরতে বিটিআরসির নতুন প্রযুক্তি
সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক বলেছেন, দেশে অবৈধ ভিওআইপি প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিদিন আড়াই কোটি মিনিট কল আদান-প্রদান হয়। ফলে সরকারের বছরে ৫০ কোটি টাকা বেহাত হচ্ছে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয়ের জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি নতুন প্রযুক্তির আশ্রয় নিয়েছে। এই প্রযুক্তির সহায়তায় অবৈধ ভিওআইপি কাজে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যবহূত সিমবক্সের সুর্নিদিষ্ট স্থান (পিন পয়েন্ট) শনাক্ত করা সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, বিটিআরসি অবৈধ ভিওআইপি শনাক্তে যে সর্বাধুনিক মেশিন নিয়ে এসেছে। তা দিয়ে কোন এলাকার কোন বাসা বা অফিসে অবৈধ ভিওআইপি হচ্ছে, যন্ত্রাংশ কোন আলমারি বা ড্রয়ারে আছে তাও চিহ্নিত করা সম্ভব। আর এই প্রযুক্তির মাধ্যমেই বিটিআরসি গত ৯ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর এই ছয়টি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।
বিটিআরসির অবৈধ ভিওআইপি শনাক্তে সর্বাধুনিক মেশিন ব্যবহারের ফলেই সম্প্রতি অভিযানগুলোতে অতীতের চেয়ে বেশি সফলতা অর্জন হচ্ছে বলেও জানান তিনি।