ফেলনা জয়তুন কাঠে ধর্মীয় নিদর্শনের প্রতিকৃতি
বেলায়েত হুসাইন
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৫
ধর্মীয় স্থান-স্থাপনা ও নিদর্শনের প্রতি প্রতিটি মুসলমানেরই বিশেষ অনুরাগ আছে। এগুলোর প্রতি একেকজন একেকরকমভাবে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করেন। এক্ষেত্রে অনেকের ভালোবাসা প্রকাশ এতটাই প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে যে, তা মানুষকে আকৃষ্ট করে ফেলে। তাদেরই একজন জর্ডানের হ্স্তশিল্পী ইয়াদ সাকার। ফেলনা কাঠ দিয়ে তিনি ধর্মীয় নিদর্শনাবলীর প্রতিকৃতি বানান।
এতে তিনি সাধারণ কোনও কাঠের অবশিষ্টাংশ ব্যবহার করেন না; বরং কোরআনে বর্ণিত বরকতময় বৃক্ষ জয়তুনকে নির্বাচন করেছেন এবং তা দিয়ে এ পর্যন্ত তৈরি করেছেন অসংখ্য নান্দনিক নিদর্শনাবলীর প্রতিকৃতি। এগুলোর মধ্যে পবিত্র কোরআন এবং ফিলিস্তিনে অবস্থিত মসজিদুল আকসার প্রতিকৃতি তাকে বিশেষ খ্যাতি উপহার দিয়েছে।
সাকারের বয়স ৫৩ বছর। তিনি রাজধানী আম্মানের একটি প্রাইভেট ওয়ার্কসপে কাজ করেন। যখন এখানে আসেন, তখন দেখেন তার চারপাশ জয়তুন কাঠে ভর্তি। তিনি ঘুমাতেন কাঠ আর করাতের মাঝখানে। তখনই তিনি ভাবেন, কাঠ দিয়ে অভিনব কিছু করবেন। তারপরই তার এ এদিকে যাত্রা। তিনি বলেন, ‘সংগ্রাম ছিল তাই সাফল্য এসেছে।’
ইয়াদ সাকার নিয়ে প্রকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আনাদোলু এজেন্সি। সংস্থাটির প্রতিবেদককে তিনি বিস্তারিত বলেছেন তার এই নিপুন কাজের অভিজ্ঞতা, উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং শুরুর কথা নিয়ে- ‘আমি আরও ৩২ বছর আগে থেকে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। আমি কারও থেকে এটি শিখিনি, এর উদ্ভাবক আমি নিজেই।’
তিনি বলেন, ‘যখন ১৯৮৯ সালে আমি একাজ শুরু করি, তখন আমার সঙ্গে ১৪ জন শ্রমিক কাজ করত। ফিলিস্তিনের বেথেলহেম থেকে আমাদের জয়তুন কাঠের জোগান আসত। কিন্তু এক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার আমাদের উৎখাত করলে যাত্রা ব্যাহত হয়।’
জর্ডানে এই শিল্প এখন হুমকির মুখে; তিনি ছাড়া আর মাত্র একজন লোক এই হস্তশিল্পের কাজ করেন। সূক্ষ্মতা ও নৈপুণ্যে অনন্য এ শিল্পসামগ্রীর বাজার এখনও বেশ বড়। সাধারণত এগুলো পর্যটক ও সৌখিন মানুষেরা কেনে। আয়াদ সাকার আমৃত্যু এটিকে টিকিয়ে রাখতে চান। ‘আমি আগে বছরে ৭৫ টন কাঠ ব্যবহার করতাম, এখন তা দুই টনে এসে থেমেছে। তবে আমি জীবন সায়াহ্ন পর্যন্ত এটি বাঁচিয়ে রাখতে চাই’ বলেন আয়াদ।
প্রতিমাসে তিনি অন্তত ৪ থেকে ৫ শত শিল্পসামগ্রী তৈরি করেন। এগুলোর মধ্যে কোরআনের আয়াত এবং তসবিহর পাশাপাশি ঘরের প্রয়োজনীয় ছোট ছোট পাত্র, জন্মদিনে ঘর সাজানোর সামগ্রী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে ঐতিহাসিক জিনিসপত্র তৈরিতে তার বিশেষ আনন্দ ও আগ্রহ বলে তিনি জানান।
জয়তুন কাঠের হস্তশিল্পের ঐতিহ্য আছে। প্রাচীন সিরিয়া অঞ্চলে এ শিল্পের গোড়াপত্তন হয়। এখানের বিস্তৃত ভূমিতে প্রচুর জয়তুন গাছ জন্মে।
সূত্র: আনাদোলু আরবি
বিএইচ/