• শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪২৮

বাংলাদেশ

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর প্রয়াণ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ মার্চ ২০১৮

মুক্তিযোদ্ধা ও ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী আর নেই। গতকাল মঙ্গলবার বেলা পৌনে একটার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।


প্রিয়ভাষিণীর ছেলে কারু তিতাস গতকাল জানান, দীর্ঘ দিন থেকেই ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী ডায়াবেটিস ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন এবং ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।


সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রিয়ভাষিণীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে দাফন করা হবে তাকে।


ল্যাবএইড হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে সেখানে ভর্তি ছিলেন। গতকাল সকালে তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। পরে চিকিৎসকরা তাকে চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি। প্রফেসর আমজাদ হোসেনের অধীনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।


প্রফেসর আমজাদ হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রিয়ভাষিণীর কিডনি, ডায়াবেটিক, হার্টসহ আগে থেকেই নানা ধরনের সমস্যা ছিল।


২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর ওয়াশরুমে পড়ে গিয়ে প্রিয়ভাষিণী পায়ের গোড়ালির হাড় সরে যায়। পরের দিন ৮ নভেম্বর রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনলে সেখানে তিনবার হৃদরোগে (কার্ডিয়াক অ্যাটাক) আক্রান্ত হন তিনি। একপর্যায়ে চিকিৎসকদের বোর্ড অস্ত্রোপচারের পরবর্তী জটিলতা আশঙ্কা করায় প্রিয়ভাষিণীকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আর্থিক কারণে তাকে বিদেশ নেওয়া সম্ভব না হয়নি। পরে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পায়ের সফল অস্ত্রোপচার হয়।


ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি খুলনায় নানার বাড়িতে। তার বাবার নাম সৈয়দ মাহবুবুল হক এবং মায়ের নাম রওশন হাসিনা। বাবা-মায়ের ১১ সন্তানের মধ্যে প্রিয়ভাষিণী সবার বড়। ১৯৬৩ সালে প্রথম বিয়ে করেন। পরে ১৯৭২ সালে প্রিয়ভাষিণী দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় স্বামী আহসান উল্লাহ আহমেদ ছিলেন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। তিন ছেলে ও তিন মেয়ের জননী তিনি।


ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী খুলনার পাইওনিয়ার গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি এবং খুলনা গার্লস স্কুল থেকে এইচএসসি ও ডিগ্রি পাস করেন। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। মাঝে কিছুদিন স্কুলে শিক্ষকতাও করেছেন। তিনি ইউএনডিপি, ইউএনআইসিইএফ, এফএও, কানাডিয়ান দূতাবাস প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০০২ এর ৭ (ঝ) এর ধারা অনুসারে মুক্তিযোদ্ধা (বীরাঙ্গনা) হিসেবে স্বীকৃতি পান তিনি।

 
স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবদানের জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দেয়। এর আগে ২০১০ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পদক পান। ২০১৪ সালে একুশের বইমেলায় তার আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘নিন্দিত নন্দন’ প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads