Logo
Logo

রাজনীতি

রাজশাহী বিএনপি

ক্ষমতার আগেই কমিটি ভাগ-বাটোয়ারা

Icon

ইলিয়াস আরাফাত, রাজশাহী

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:৩৩

ক্ষমতার আগেই কমিটি ভাগ-বাটোয়ারা

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজশাহীতে একেবারেই নিষ্ক্রিয় ছিল বিএনপির কার্যক্রম। মামলা-হামলার ভয়ে নেতাকর্মীদের অনেকেই দলীয় কর্মসূচি এড়িয়ে চলতেন। মিছিল-মিটিংয়েও নেতাকর্মীদের উপস্থিতি চোখে পড়ত না। 

ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে ৫ আগস্টের আগে মিছিল করায় রাজশাহী মহানগর বিএনপির অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়। নগর বিএনপির ও অঙ্গসংগঠনের অফিসেগুলোতে হামলা হয়। কিন্তু গণ অভ্যুত্থানের পরের চিত্র আলাদা। এক সময়ের বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রাজশাহী যেন আবার নবযৌবন ফিরে পেয়েছে।

নগরীতে দলীয় ছোটো-খাটো মিছিলেও হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। রাজশাহী মহানগর বিএনপির সেই অফিস এখন নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত। এমনকি ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয়গুলোতেও নেতাকর্মীদের ভিড়। এত চাঙা মনোভাবের পরও বিএনপির এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা এখন নিজেরাই। 

এগিয়ে যাওয়ার যখন সময়, তখন বিভক্ত পড়েছে নগর বিএনপি। এই দ্বন্দ্ব অনেকে স্বাভাবিকভাবে নিলেও বাইরে থেকে সাধারণ মানুষ তা ভালোভাবে গ্রহণ করছেন না। এতে নষ্ট হচ্ছে দলের ভাবমূর্তি। এমনটাই দাবি বিএনপির তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের।

রাজশাহী মহানগর আহ্বায়ক কমিটি ইতোমধ্যে দুই ভাগে বিভক্ত। সম্প্রতি জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে দলটির নেতাকর্মীরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে কর্মসূচি পালন করে। তখনই সাধারণ মানুষের কাছে অন্তঃকোন্দলের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। 

বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার বক্তব্য, বিএনপি বড় দল। কিন্তু এর কমিটি ও পদসংখ্যা নির্ধারিত। সিনিয়র নেতার সংখ্যাও বেশি। অনেকেই নেতৃত্বে আসতে চান। আর দ্বন্দ্বটা সেখান থেকেই। কিন্তু দলের স্বার্থে সবাই এক।

কিন্তু সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে তৃণমূলের কর্মীরা বিষয়টিকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না। তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী জানান, দীর্ঘদিন পর বিএনপি রাজনীতি চর্চার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু সেই সুযোগ যদি নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে নষ্ট হয়, তাহলে ক্ষতি হবে বেশি। এমনকি অন্যরা সুযোগ নিতে ছাড়বে না। আর নতুনদের কাছেও ভাবমূর্তি হারাবে বিএনপি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন। ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর ওই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। বুলবুল-মিলন কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্র থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী ইশাকে আহ্বায়ক ও মামুনুর রশিদকে সদস্যসচিব করে ৯ সদস্যের রাজশাহী মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়।

২০২২ সালের ৫ মার্চ ৬১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর থেকে ওই কমিটির মাধ্যমেই রাজশাহী মহানগর বিএনপির কার্যক্রম চলে আসছিল।

দলীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, চলতি বছর ২৪ অক্টোবর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ইশা, যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা ও সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ নগরের সাত থানার আংশিক আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। কমিটিগুলোর পদ নিয়ে নানান বিতর্কের অভিযোগ তোলেন মহানগর আহ্বায়ক কমিটির চার যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, আসলাম সরকার, জয়নাল আবেদিন ও ওয়ালিউল হক রানা। ওই চার নেতা পাল্টা থানা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়ালিউল হক রানা বলেন, ‘রাজশাহী মহানগরে ৩৭টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড। এর মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে ৩৬টির। ওয়ার্ড কমিটিগুলোর পাশাপাশি তারা ঘরে বসে থানা কমিটি করেছেন। কমিটি গঠন নিয়ে মতবিরোধের কারণে আমরা পাল্টা কমিটি করেছি।’

রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ইশা বলেন, ‘আমাদের কমিটির বিরুদ্ধে চার যুগ্ম আহ্বায়ক পাল্টা কমিটি দিয়েছেন। তাদের দেওয়া কমিটির কোনো বৈধতা নেই।’

দ্বন্দ্বটা দলীয় নেতাদের ভেতর ভেতর থাকলেও প্রকাশ্যে আসে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসকে কেন্দ্র করে। ওই দিন বিএনপির তিনটি গ্রুপ আলাদা কর্মসূচি পালন করে। 

৭ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর নেতৃত্বে জাতীয় পতাকা উত্তোলনসহ নগরজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। 

আর ৮ নভেম্বর মহানগর বিএনপির চার যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, আসলাম সরকার, জয়নাল আবেদিন ও ওয়ালিউল হক রানার নেতৃত্বে রাজশাহী কলেজ চত্বরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও র‌্যালি হয়। 

পরের দিন ৯ নভেম্বর বিএনপির মহানগর কমিটির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ইশা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা ও সদস্যসচিব মামুনুর রশিদের নেতৃত্বে নগরের ভুবনমোহন পার্কে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির মতো অবস্থা জেলা বিএনপিরও। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কোনো কমিটি হয়নি। সেখানেও দলের নেতাকর্মীরা কয়েকভাগে বিভক্ত।

বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত বলেন, ‘বিএনপি একটি বৃহৎ সংগঠন। সবাই নেতৃত্বে আসতে চায়। প্রতিযোগিতার জায়গা থেকে এমনটা হতে পারে। এছাড়া দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে মান-অভিমান থাকতেই পরে। আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি। সমাধানের জায়গায় পৌঁছেছি। খুব তাড়াতাড়ি কেন্দ্রীয় নেতাদের কয়েকজন রাজশাহী আসবেন। আশা করছি, এই বিরোধ মিটিয়ে ফেলা যাবে।’

রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ বলেন, ‘দল একটি। এখানে দুই ভাগ বলতে কিছু নেই। আমরা সবাই এখন তারেক রহমানের দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছি। তিনি এলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’

এমজে/ওএফ/এআরএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর