শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
রাবির তিন শিক্ষককে যেভাবে হত্যা করা হয়
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, রাবি
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:৪৬
বাংলাদেশ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষপ্রান্তে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আন্দাজ করতে পারে, এই অদম্য বাঙালিকে আর রুখে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তারা শাসনভার ছেড়ে দেওয়ার আগে এক ভয়ানক ষড়যন্ত্রের জাল বুনে। জাতিকে মেধাশূন্য করে দেওয়ার নিমিত্তে তারা এদেশীয় দোসরদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষক, বিজ্ঞানী, চিন্তক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, ক্রীড়াবিদ, সরকারি কর্মকর্তাসহ দেশের বহু কৃতি সন্তানকে হত্যা করে। তৎকালীন পাকবাহিনীর শেষ নৃশংস গণহত্যার শিকার হন তারা।
একইসময়ে পাক হানাদার বাহিনীদের কাছে নির্মম হত্যার শিকার হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবী। তারা হলেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক শহীদ মোহাম্মদ হবিবুর রহমান, মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মীর আবদুল কাইয়ুম ও সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক সুখরঞ্জন সমাদ্দার।
শহীদ মোহাম্মদ হবিবুর রহমান পশ্চিমপাড়ায় শিক্ষকদের কোয়ার্টারের ১৯ নম্বর বাড়ির ‘বি’তে থাকতেন। ১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিল বিকেলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জিপ গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। বর্তমানে তার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের নামকরণ করা হয়েছে 'শহীদ হবিবুর রহমান হল'।
আরেক নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ছিলেন মীর আবদুল কাইয়ুম। উনসত্তরের গণ-আন্দোলনে তার ছিল প্রত্যক্ষ ভূমিকা। একাত্তরের ২৫ নভেম্বর রাতে তিনি ঘোড়ামারায় তার শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। পাক বাহিনীর এক অনুচর এসে ক্যাপ্টেন তাকে যেতে বলেছেন বলে ডেকে নিয়ে যায়। সেই রাতেই সেনারা একটি গুলি খরচ না করেই পদ্মার পাড়ে তাকে জীবন্ত কবর দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ইন্টারন্যাশনাল ডরমেটরির' নামকরণ করা হয়েছে তার নামে।
১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিলের সকাল। খট খট শব্দে সুখরঞ্জন সমাদ্দারের বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ল পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি দল। দরজা খুলে দেওয়ার আগেই লাথি মেরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকল তারা। বাড়িতেই ছিলেন সুখরঞ্জন। স্ত্রী চম্পা সমাদ্দারের কোলে ৯ মাসের এক মেয়ে। পাশে দাঁড়িয়ে তিন ও পাঁচ বছরের আরও দুই সন্তান। সুখরঞ্জনকে সঙ্গে নিয়ে পুরো বাড়ি ঘুরে দেখল সৈন্যরা। যাওয়ার সময় গাড়িতে তুলে নিয়ে গেল সুখরঞ্জনকে। তারপর তাকে আর পাওয়া যায়নি।
এভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময় হাজারো বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেন পাক হানাদার বাহিনী। অজস্র রক্তের ঋণের উপর ভর করে দাঁড়িয়েছে আজকের বাংলাদেশ। তাই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এলে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।
ওএফ