ম্যাসটাইটিস ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করলেন বাকৃবির অধ্যাপক

বাকৃবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:০১
-678384e053b86.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন ও মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান ও তার গবেষক দল দেশে প্রথমবারের মতো গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস (ওলান প্রদাহ) রোগের জন্য কার্যকরী ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করেছেন। চার বছর ধরে চলা গবেষণার পর এই ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। যা গাভীর দুধ উৎপাদন ও সুস্থতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
ম্যাসটাইটিস একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগ। যা গাভীর ওলানে আক্রমণ করে। এই রোগে গাভীর দুধ উৎপাদন কমে যায়। কখনো কখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে খামারিরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এ ছাড়া ব্যাকটেরিয়া অনেক সময় এন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্ট হয়ে পড়ে। যার কারণে এই রোগের চিকিৎসায় প্রচলিত পদ্ধতি কার্যকরী হয় না।
ড. বাহানুর জানান, ২০২০ সালে গবেষণা শুরু হওয়ার পর তারা ময়মনসিংহ, ঢাকা, নেত্রকোনাসহ ৯টি জেলার ২০৯টি খামারে জরিপ পরিচালনা করেন। যেখানে ৪৬% গাভি ম্যাসটাইটিসে আক্রান্ত ছিল। জরিপের মাধ্যমে স্যাম্পল সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে দীর্ঘকালীন ক্লিনিক্যাল টেস্টের পর তারা এই ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে সফল হন। গবেষণায় ব্যবহৃত ৪টি ব্যাকটেরিয়া— Streptococcus agalactiae, Escherichia coli, Staphylococcus aureus, এবং Streptococcus uberis—এর বিরুদ্ধে কার্যকর এই ভ্যাকসিন।
ড. বাহানুর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাপ্ত অভ্যন্তরীণ প্রযুক্তি দিয়ে আমরা ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছি। এটা প্রায় শতভাগ কার্যকরী।’ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একটি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ৭০% হলেই সেটি সফল হিসেবে বিবেচিত হয়, কিন্তু তাদের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনটি প্রায় শতভাগ কার্যকরী।
ভ্যাকসিনটি গাভীর গর্ভাবস্থায় প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম ডোজটি গর্ভাবস্থার ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে এবং দ্বিতীয় ডোজটি গাভীর বাচ্চা হওয়ার আগে ৯ থেকে ৯.৫ মাসে দিতে হবে। প্রতি ডোজে ৫ মিলি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। এই ভ্যাকসিনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং দুটি ডোজ দেওয়ার পর গাভীর ম্যাসটাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯০% কমে যায়।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি ও ইউএসডিএর অর্থায়নে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হওয়া এই গবেষণাটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়। বর্তমানে এই ভ্যাকসিনের বাজারজাত করার কাজ চলছে। খামারিদের জন্য এটি একটি বড় সাফল্য হিসেবে প্রমাণিত হবে। কারণ তারা সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী দামে এই ভ্যাক্সিনটি ব্যবহার করে তাদের গাভীর সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারবেন।
গবাদিপশুর স্বাস্থ্যখাতে অধ্যাপক ড. বাহানুর রহমানের এই উদ্ভাবন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে গাভি খামারিদের জন্য দুধ উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি খামারি কমিউনিটিতে নতুন আশা সৃষ্টি হবে।
এমজে