কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা
বাকৃবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:০৮
ছবি : বাংলাদেশের খবর
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) হেলথ কেয়ার সেন্টারের নিম্নমানের স্বাস্থ্যসেবার জন্য দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে। অভিযোগ উঠেছে, এখানকার স্বাস্থ্যসেবা মানে শুধুমাত্র কয়েক প্রকার ওষুধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানান আলোচনা ও সমালোচনা করছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিপরীতে বর্তমানে হেলথ কেয়ারে মাত্র আটজন চিকিৎসক রয়েছেন। এর মধ্যে নিয়মিত ছয়জন ও দুইজন খণ্ডকালীন চিকিৎসক রয়েছেন। তবে ৫টি মেডিকেল অফিসারের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় সেবা দেওয়ায় বিঘ্ন ঘটছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ারে ১০ জন কর্মকর্তা এবং ১৬ জন কর্মচারী থাকলেও নার্সের কোনো পদ নেই। বিশেষায়িত কোনো ইউনিট এবং ডেন্টাল বিভাগও চালু নেই। সর্বশেষ ১৪ বছর আগে হেলথ কেয়ারের ডেন্টাল বিভাগে একজন খণ্ডকালীন নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক ছিলেন। ২০১১ সালে তিনি চলে যাওয়ার পর আর কোনো নতুন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বিভাগটির ডেন্টাল চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো এখন প্রায় অকেজো। যার ফলে ওই যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
হাসপাতালের ওষুধের সরবরাহও অপ্রতুল। ৭ প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক, গ্যাসের ওষুধ, চর্মরোগের মলম ও প্যারাসিটামল বিনামূল্যে প্রদান করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া বহিরাগত রোগীদের ভিড়ে শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। তাছাড়া লিফট বন্ধ থাকায় হাঁটা চলায় অক্ষম রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, হেলথ কেয়ার সেন্টারের নিচতলার শৌচাগারগুলো অপরিচ্ছন্ন ও কোনোটার দরজা ভাঙ্গা। হেলথ কেয়ারের বাইরে রয়েছে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। সেখানে বিভিন্ন আবাসিক হলের ময়লা ফেলা হয়। দিনের বেলা কখনো সেন্টারটির বারান্দা মোটরসাইকেল রাখার পার্কিং হিসেবে ব্যবহার হতে দেখা যায়। তাছাড়া হেলথ কেয়ারের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা কয়েকবছর আগে থেকেই নারী শিক্ষার্থীদের সাময়িক আবাসনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শিক্ষার্থী হাসান তপু জানান, আমি কয়েকদিন আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলা হয়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ারে জরুরি চিকিৎসার সব ব্যবস্থা থাকার কথা। কিন্তু ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই। আসলে পুরো ব্যবস্থাপনাই অগোছাল।
স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মাহিরুজ্জামান নিলয় বলেন, অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না। অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া খুব জটিল একটি প্রক্রিয়া। ডাক্তারের সিগনেচার হতে শুরু করে আরও অনেক নাটক। তার উপর অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর ভাঙ্গা। সাইরেন ঠিক নেই। বাজেই না। অ্যাম্বুলেন্স যেন লক্কর ঝক্কর গাড়ি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মো. সাঈদুর রহমান (শওকত) জানান, আমাদের হেলথ কার্ড রেডি। ভিসি মহোদয় ও অ্যাডভাইজার মহোদয়ের সাথে কথা বলে শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের হাতে পৌঁছে দিব। বিশ্ববিদ্যালয় ব্যক্তিগতভাবে কোনো ঔষধ কিনে না। সরকারি কিছু ক্রয় নীতিমালা রয়েছে। ওষুধের গুণগত মান ও মূল্য দেখেই এ ওষুধ ক্রয় করা হয়।
হেলথ কেয়ারের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারে তিনি জানান, একটা সময় কেবল ৮-১০টা টেস্ট করা হতো, যা এখন ২৮ টা করা হয়। যার মধ্যে ১৫টা টেস্ট করা হয় নামমাত্র মূল্যে। ডেঙ্গু টেস্ট, ইউরিন টেস্ট সম্পূর্ণ ফ্রি। বাকি টেস্টগুলোর দামও বাহিরের হাসপাতালগুলো থেকে অনেক কম। ছাত্রদের জন্য প্রায় ৬০-৭০% ছাড়। তাছাড়া এক্সরের জন্য রয়েছে ডিজিটাল মেশিন।
অ্যাম্বুলেন্সের কাঠামোগত ত্রুটি ও সময় মতো না পাওয়ার বিষয়ে নিয়ে ডা. সাঈদুর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল গাড়ি পরিবহন শাখার অন্তর্গত। দুটা অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটা সব সময় থাকে, আরেকটা রিজার্ভ থাকে। অ্যাম্বুলেন্স কে নিচ্ছে, সবই রেকর্ড থাকে। অ্যাম্বুলেন্স ভাঙ্গা কিনা, জ্বালানি রয়েছে কিনা, সব দেখে পরিবহন শাখা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, হেলথ কেয়ারের ডাক্তার সংকট সমস্যার ব্যাপারে আমরা অবগত রয়েছি। সমস্যাটি সমাধানের ব্যাপারে ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং তা নিরসনের কাজও শুরু হয়েছে। ডাক্তার নিয়োগের ব্যাপারটি সময় সাপেক্ষ একটি ব্যাপার। তাই ডাক্তার সংকটের সমস্যা দূর করতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে ঔষধের ব্যাপারটি খতিয়ে দেখে খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আশিকুজ্জামান/এমবি