নারীসহ ২ জবি শিক্ষার্থীকে মেরে হাসপাতাল পাঠাল ছাত্রদলকর্মী
জবি প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩:১৫
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুতা পায়ে উঠার প্রতিবাদ করায় তাদের উপর হামলা চালিয়েছে কয়েকজন। এ হামলার নেতৃত্ব দেয় মার্কেটিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলকর্মী অনিক কুমার দাশ। অনিক ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কাজী জিয়া উদ্দিন বাসেতের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে পরিচিত।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।
হামলায় রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তামান্না তাবাসসুম ও আকাশ আলী আহত হন৷ ঢাকা মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আহত আকাশ আলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই শিক্ষার্থী জুতা পায়ে শহীদ মিনারে উঠলে প্রতিবাদ করেন রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আকাশ। এরপর তাদের মাঝে কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে জুতা পায়ে শহীদ মিনারে ওঠা মার্কেটিং বিভাগের ছাত্রীর বন্ধু মাহী আকাশকে ধাক্কা দিতে গেলে আকাশ তার হাত সরিয়ে দেয়। এ সময় মাহী তার বিভাগের বন্ধু অনিককে ফোন দেয়। ফোন পেয়ে দ্রুত ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থীসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় অনিক। এলোপাতাড়ি মারধর করে আকাশকে। তার সাথে থাকা এক মেয়ে শিক্ষার্থীকেও আঘাত তারা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আকাশ বলেন, আমরা বিভাগের প্রোগামের জন্য স্টেজের কাজ করছিলাম। বিদ্যুৎ চলে গেলে চা খাওয়ার জন্য নিচে আসি। তখন দুজন ছেলে-মেয়ে জুতা পায়ে শহীদ মিনারে উঠে। তাদেরকে এ বিষয়ে বললে মেয়েটি বলেন, ‘আমার ইচ্ছা তাই জুতা পায়ে উঠেছি।’ একপর্যায়ে ছেলেটি আমার উপর চড়াও হয়। এরপর আমি তাকে আঘাত করেছি এটা বলে তার বন্ধু অনিককে ফোন দেয়।
তিনি বলেন, তখন অনিকসহ বেশ কয়েকজন এসে আমার উপর অতর্কিত হামলা করে। তারা কয়েক দফায় শহীদ মিনারের সামনে ও পরে গণিত বিভাগের সামনে হামলা করে। আমার বুকে কিল-ঘুষি ও পেটে লাথি মারে। শহীদ মিনারে থাকা একটি বাঁশ দিয়েও আমাকে আঘাত করে অনিক। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে আমার বান্ধবী তামান্না ও বাসার আহত হয়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে অনিক বলেন, আমার বন্ধু মাহী আমাকে ফোন দিলে শহীদ মিনারে যাই। গিয়ে দেখি তার (মাহী) সঙ্গে একজনের (আকাশ) কথা কাটাকাটি চলছে। এ সময় আমি অসুস্থ থাকায় পেছনে ছিলাম। অন্যরা গিয়ে আকাশকে মেরেছে।
এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী রসায়ন বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক আব্দুল আওয়াল বলেন, আমি হতবাক হয়ে গেছি। আমার সামনেই আমার শিক্ষার্থীকে তিন দফা মেরেছে।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, এটা বিভাগের শিক্ষার্থীদের একটা বিষয় বলে জেনেছি। ছাত্রদলের কেউ জড়িত কিনা খতিয়ে দেখব।
এ বিষয়ে রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, আমার বিভাগের একজন শিক্ষার্থীকে এভাবে পেটাল, তাও আমার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকের সামনে- এটা দুঃখজনক। প্রত্যেক শিক্ষার্থীই আমার সন্তান। সন্তানের শরীরে এমন আঘাত দেখলে যেকোনো পিতারই কষ্ট হবে। অব্যশই এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিচার চাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতি দ্রুতই ব্যবস্থা নেবে আমাকে বলেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, সন্ধ্যার দিকে শহীদ মিনার চত্বরে একটা মারামারির ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। সহকারী প্রক্টর ফেরদৌস স্যার তাৎক্ষণিক উপস্থিত হয়েছেন। রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান আমাকে বিষয়টি অবগত করেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
- জান্নাতুন নাইম/ওএফ