তিতুমীর কলেজের আন্দোলন প্রত্যাহার, কয়েকটি দাবি মানার আশ্বাস
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:৫০
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা
রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা অবশেষে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন। সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর তারা জানান, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে সাত দিনের মধ্যে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হলে আবারো কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সোমবার সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিতুমীরের ১২ শিক্ষার্থী বৈঠকে বসেন। ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই যুগ্ম সচিব ও গুলশান জোনের উপপুলিশ কমিশনারসহ কলেজের কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ ইস্যুতে সরকার পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাসে আমরণ অনশনও ভেঙেছেন শিক্ষার্থীরা। রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামান ও তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রানী মণ্ডলের উপস্থিতিতে তারা অনশন ভাঙেন। এ সময় অনশনে বসা শিক্ষার্থীদের প্যাকেটজাত আমের জুস খাওয়ান অধ্যক্ষ।
সোমবার (৩ ফ্রেব্রুয়ারি) রাত সোয়া ৯টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামান এ ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর আনন্দ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে ফিরে যায় শিক্ষার্থী।
তবে তারা জানিয়েছে, সাত দিনের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে ফের রাজপথে নামবে তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন যুগ্ম সচিব। তিনি বলেন—১. চলতি শিক্ষা বর্ষের ভর্তি পদ্ধতি অধিভুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হবে নাকি আলাদা সাত কলেজকে নিয়ে হবে তা দ্রুত জানানো হবে। এরপর সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে তাই করা হবে।
২. ছাত্রদের আবাসিক ভবন ও গাড়ি সংকট দূর করতে ডিএমপি ও রাজউকের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে যানবাহনের বিষয়টি সমাধান করা হবে।
৩. শিক্ষার্থীর আসন সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে দাবিতে। যৌক্তিক পর্যায়ে যাতে ভর্তি করা যায় সে বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসির সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৪. দুটি বিষয় খোলার বিষয়ে দাবি করা হয়েছ। ওই দুটি সাবজেক্ট খোলার ব্যাপারে জোর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
৫. আগামী ৭ দিনের মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকদের (১৫ জন) তিতুমীর কলেজে বদলির ব্যবস্থা করা হবে।
৬. ১৫২ জন নতুন শিক্ষকের যাতে পদ সৃষ্টি করা যায় সে বিষয়ে তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
৭. শিক্ষার মান যাতে আরও উন্নত হয় সে বিষয়ে অধ্যক্ষকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে। সেই কমিটি নিজেদের মতো করে শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করবে। সেখানে ছাত্র প্রতিনিধিরাও থাকতে পারে।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে যে দাবিগুলো করা হয়েছিল
১. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে।
২. শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’সহ বাংলাদেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করে যোগ্যতা বিবেচনায় নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে।
৩. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর আইন উপদেষ্টার চাপ সৃষ্টি করার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টির দায়ভার মাথায় নিয়ে আইন উপদেষ্টাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
প্রসঙ্গত, সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে বেশ কয়েকমাস ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে মিছিল, সড়ক-রেলপথ অবরোধ, স্মারকলিপি প্রদান, ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়। তবে সম্প্রতি এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পেয়ে গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেল থেকে দাবি আদায়ে আমরণ অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। অবশেষে তাদের ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলে সরকার তাদের বেশিরভাগ দাবি মেনে নিল।
জেসি/বিএইচ/ওএফ