Logo

ক্যাম্পাস

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্র সংসদের দাবি জোরালো হলেও প্রশাসন তাকিয়ে অন্যদের দিকে

Icon

কুবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:০৬

ছাত্র সংসদের দাবি জোরালো হলেও প্রশাসন তাকিয়ে অন্যদের দিকে

গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের বৈধ দাবিদাওয়া জানানোর জন্য নেতৃত্বদানের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জোরালো হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন সময় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ গঠনের দাবি করে আসছে শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ জানুয়ারি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী গণমাধ্যমকে জানান, এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি প্রদান করলে অবশ্যই প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর পরদিন অর্থাৎ ১৬ জানুয়ারি ছাত্র সংসদ গঠনের দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন শিক্ষার্থীরা। 

তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে এখন পর্যন্ত ছাত্র সংসদ গঠনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। এরপর গত ১৯ জানুয়ারি ফের শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ছাত্র সংসদ গঠনের দাবি উত্থাপিত হয় এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। 

সাধারণ শিক্ষার্থী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন এবং প্রশাসনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছাত্র সংসদ গঠনের ব্যাপারে এখনো ঐকমত্য পোষণ করতে পারেনি তারা। শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্যে ছাত্র সংসদ চাইলেও রাজনৈতিক সংগঠনের কেউ কেউ ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি চালুর পর ছাত্র সংসদ চান। আবার কেউ কেউ শিক্ষার্থীদের সাথেই ছাত্র সংসদের দাবি জানান। অপরদিকে প্রশাসন এই ব্যাপারে নির্বিকার হয়ে তাকিয়ে আছে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক নাঈমুর রহমান বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে আমরা বিভিন্নভাবে প্রশাসনকে জানিয়ে আসতেছি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারীতে ভিসি স্যারের কাছে স্মারক লিপি জমা দেই। কিন্তু প্রশাসন থেকে তেমন কোনো সাড়া এখন পর্যন্ত আমরা পাচ্ছি না। প্রশাসনকে বলে দিতে চাই আমরা ঝিমিয়ে যাইনি। ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলনের প্রক্রিয়া চলমান রাখবো। আশা করব প্রশাসন ছাত্র সংসদ চালুর জন্য অগ্রসর পদক্ষেপ নেবে। খুব দ্রুত ফলাফল না পেলে কঠোর কর্মসূচির আহ্বান করবো আমরা।’

মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী পাভেল রানা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রশাসন দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শ্রদ্ধার সঙ্গে বলতে চাই বিশ্ববিদ্যালয়কে নব্য ছাত্রলীগের কার্যালয় রূপান্তর না করে অনতিবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। কুবি ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও ওপেন ও গোপন সংগঠন তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামে ওপেন ও গোপন দলের লিডারদের ভিসি স্যারের পিছনের সিটে দেখা যায়, যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে মশকরা করার শামিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’র ব্যানারেও তাদের দলীয় স্বার্থ হাসিলের প্রয়াস স্পষ্ট। যা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পেইজগুলোর ফেইক আইডি ও পোস্টগুলো দেখলেই বোঝা যায়। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাস ঘটে যাওয়া রক্তাক্ত ঘটনাকে শুধু দুর্ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায়ও ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তাই আমরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে অধীর আগ্রহী।

কুবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন, ‘দেশের এখন যে পরিস্থিতি বা আমাদের ক্যাম্পাসের যে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া হয় তাহলে আমার মনে হয় না এটা নিরপেক্ষ থাকবে। কারণ এখন সাধারণ শিক্ষার্থী বলে কোনো শিক্ষার্থী নাই। যারা সাধারণ শিক্ষার্থী বলে নিজেদের পরিচয় দেয় তারাও কোনো না কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্যই করে। আমরা অবশ্যই ছাত্র সংসদ চাই তবে তার আগে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি উন্মুক্ত করতে হবে। ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি চর্চার সুযোগ করে দিয়ে তারপর ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া হোক।

কুবি শাখা  ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইউসুফ ইসলাহি বলেন, ‘ছাত্র সংসদ সারাদেশের সকল ছাত্রের প্রাণের দাবি। এই দাবির সাথে ছাত্র শিবির একমত। ছাত্র শিবির সবসময়ই ছাত্রদের পাশে আছে এবং ছাত্র সংসদ গঠনের কথা বলে আসছে। এক্ষেত্রে যারা ছাত্র সংসদ গঠনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায় ছাত্রশিবির তাতে প্রতিবাদ করে আসছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ গঠনের দাবি খুবই যৌক্তিক দাবি। কারণ ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য ছাত্রদের প্রতিনিধি দরকার যা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সম্ভব।

উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের এক মাসের বেশি সময় হয়ে গেলেও এখনো কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এক্ষেত্রে আসলে সমস্যা কোথায় বলে মনে হয়, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে যেহেতু ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ, তাই এখানে কোনো ছাত্র নেতার মতামত নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে মনে করি। আর কোনো রাজনৈতিক দল যদি ছাত্র সংসদ গঠনে বাধা দেয়, তাহলে আমি মনে করি প্রশাসনের কারো কথায় কর্ণপাত না করে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া উচিত।

ছাত্র সংসদের ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘আমরা এখনও কিছু ভাবছি না। নিজে থেকে এখনও কিছু চিন্তা করছি না। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। তারা যদি কোনো ধরনের ফর্মাল প্রসিডিওর গ্রহণ করে তাহলে ভাবব।

ইমতিয়াজ রিফাত/এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর