বৈষ্যমবিরোধী আন্দোলন
‘চিকিৎসার জন্য আমার ছেলে পড়া বাদ দিয়ে ভ্যানে রুটি বেচে’
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:১০
‘চিকিৎসার জন্য কোনো সহযোগিতা পাইনি, খরচ জোগাতে নবম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলে পড়ালেখা বাদ দিয়ে এখন ভ্যানে রুটি বেচে’— বৈষ্যমবিরোধী আন্দোলনকালে আহত রাজধানীর এক বাস হেল্পার নুরে আলম এভাবেই জানালেন নিজের দুঃখের কথা। অভাবের সংসারে সাদামাটা জীবন তার। ছিলেন না কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবু ফ্যাসিবাদের আক্রমণ থেকে রেহাই পাননি তিনি।
বৈষ্যমবিরোধী আন্দোলনকালে ১৮ জুলাই রাজধানী ঢাকায় কারফিউ জারি হলে মহাখালীতে আটকা পড়েন নুর। বাসায় ফেরার জন্য ছিল না অন্য কোনো পথ, তাই মহাখালী হয়েই রওয়ানা দেন; কিন্তু আর বাড়ি যেতে পারেননি। আর্মির লাঠিপেটার মধ্যে পড়েন। এই আঘাত তার জীবনের গতিপথ থামিয়ে দেয়।
এলোপাতাড়ি লাঠিপেটায় শরীরেরচেয়ে অন্তরে আঘাত পান বেশি। ফলে বাসায় ফিরতেই বিদ্রোহী স্পৃহা জেগে ওঠে। ঝাঁপিয়ে পড়েন আন্দোলনে। কিন্তু ফ্যাসিবাদের অন্ধকার রাজনীতি থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে নিজেই পড়েছেন অন্ধকারে। চোখ দিয়ে এখন আগের মতো দেখতে পান না কিছু। দেখতে পান না প্রিয় স্ত্রী, আদরের সন্তান কিংবা লাল-সবুজের দেশকে।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টনে হোটেল ফার্সে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ কর্তৃক আয়োজিত ‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আহতদের স্মৃতিচারণ’ অনুষ্ঠানে এমন বিবর্ণ গল্প শোনান নুরে আলম নিজেই।
মঞ্চে উঠে তিনি বলেন, ‘আমি খুবই সাদামাটা জীবনের মানুষ। এভাবে মঞ্চে কখনো কথা বলার সুযোগ হয়নি।’
নিজের আন্দোলনগল্প (সংক্ষিপ্ত) শুনিয়ে দুই সন্তানের এই জনক বলেন, ‘১৮ জুলাই কোনো অপরাধ ছাড়াই যখন আমাকে মার খেতে হলো, তখন শরীরে ‘জিদ’ উঠল— কোনোকিছু না করেও আমি আজ মার খেলাম! এদিন থেকেই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমার সন্তানরাও আন্দোলন করেছে।’
সবশেষ নুরে আলম বলেন, ‘৪ (আগস্টে) তারিখে মহাখালী থেকে তেজগাঁও অভিমুখে আসার জন্য রওয়ানা দিই। তখন আওয়ামী ফ্যাসিবাদের একটি মিছিলি বের হয়। এ সময় পুলিশ আমাদের প্রতিহত করার জন্য গুলি ছুঁড়ে। গুলিতে গাড়ির গ্লাস ভেঙে আমার চোখে পড়েছে। এরপর থেকে আমি অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য কারো কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। খরচ চালাতে এখন আমার নবম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলে পড়ালেখা বাদ দিয়ে এখন রুটি বিক্রি করে।’
ডিআর/এটিআর/ওএফ