আবু তালেব
আবু তালেব—৬০ বছরের দীর্ঘ জীবনে একাধিক বাধার সম্মুখীন হয়ে আজ তিনি পথে পথে ঘুরছেন। নিজে তেমন কোনো লেখাপড়া করতে পারেননি, তবে সন্তানদের জন্য উচ্চশিক্ষার স্বপ্নে ঢাকায় এসেছিলেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেই স্বপ্নের শহরটিতেই হতাশা আর সংগ্রামের মধ্যে বন্দি হয়ে পড়েছেন তিনি।
গত দু’বছর আগে নোয়াখালী থেকে ঢাকায় পাড়ি জমান আবু তালেব। টাকার নগরীর নাম বহুবছর থেকে শুনেছেন তিনি। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য, টাকা দিলো না ধরা। পাথুরে শহরের কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে এক নিঃস্ব জীবনের পথে পা বাড়িয়েছেন এই প্রবীণ।
বাস্তবতা ও মানুষের চোখের ভাষা পড়তে পারেন আবু তালেব। তাই সব হতাশার মাঝেও নতুন এক পথের দিশা পান। সাদা কাগজে কলম নিয়ে জীবনের বাস্তবতা, মানুষের দুঃখ-কষ্টের গল্পগুলো লিখতে শুরু করেন তিনি। তার লেখা উপন্যাস ও ছোট গল্পে উঠে এসেছে সমাজের নানা দিক। ‘আমার শেষ গল্পে তুমি’, ‘রক্তের আবার রং কী’, ‘ছেড়ে দিলাম তোমার হাত’, ‘এক ফোটা বিষ দাও’, ‘তুমিও কাঁদবে’— ইত্যাদি গল্পের মাঝে তার আত্মবোধ ও পৃথিবীর প্রতি ক্ষোভ ফুটে উঠেছে।
বিষাদমাখা কণ্ঠে তালেব বলেন, ‘সংগ্রাম মানুষের জীবন পরিবর্তন করে দেয়। সেই পরিবর্তনের আশায় আমি এসেছিলাম টাকার শহরে। কিন্তু আমি হতাশ হয়ে বসে রয়েছি প্রকৃতির মাঝে।’
আবু তালেব সংগ্রামী পথিক। প্রতিনিয়ত দু-মুঠো খাবারের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে রাস্তার মোড়ে কিংবা পার্কের কোনো এক প্রান্তে। লাল-শরম বাদ দিয়ে প্রতিভার বিকাশ ঘটালেও তাকে নিয়ে অনেকে করেছেন ছেলেখেলা। তার লেখা উপন্যাস প্রকাশের নাম করে নিয়ে গায়েব হয়েছেন আগ্রহীজনরা।
দিনশেষে তিনি এখনো রমনার লেকের ধারে বসে আছেন, জীবনকে বুঝতে এবং তার অনুভূতিগুলো সবার সামনে তুলে ধরার আশা নিয়ে। তার একটাই ইচ্ছা, তার লেখা একদিন প্রকাশ পাবে, এবং সেই লেখা হবে ‘আত্মকান্নায় আবু তালেব।’
এটিআর/