Logo
Logo

সারাদেশ

পাহাড়ে বন্ধ হয়নি অস্ত্রের ঝনঝনানি

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫০

পাহাড়ে বন্ধ হয়নি অস্ত্রের ঝনঝনানি

ছবি : সংগৃহীত

পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৭ বছর পূর্ণ হলো আজ (২ ডিসেম্বর)। পাহাড়ের রক্তাক্ত পরিস্থিতির অবসানে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বিগত আওয়ামী লীগ সরকার শান্তিচুক্তি করে সন্তু লারমার নেতৃত্বে জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সাথে।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের উপস্থিতিতে সরকারের পক্ষে চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও জেএসএস নেতা সন্তু লারমা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

৭২ ধারা সংম্বলিত ওই চুক্তি মোতাবেক পাহাড়িরা অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন। চুক্তিতে পাহাড়িদের আদিবাসী হিসেবে নয়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

চুক্তি মোতাবেক, ১৯৯৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে সন্তু লারমার নেতৃত্বে শেখ হাসিনার কাছে প্রথম ধাপে শান্তিবাহিনীর ( জেএসএস) ২৪৫ সদস্য অস্ত্র সমর্পণ করেন। পরে দ্বিতীয় ধাপে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার ররাদম, তৃতীয় ধাপে রাঙ্গামাটির বাগাইছড়ি ও চতুর্থ ধাপে খাগড়াছড়ির পানছড়ির দুদুকছড়ায় অস্ত্র সমর্পণ করে।  এভাবে চার ধাপে শান্তিবাহিনীর এক হাজার ৯৪৫ সদস্য সরকারের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করে।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ১৯৯৮ সালের ৬ মে স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন সংশোধন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন সংসদে পাস হয়।

আর ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। খাগড়াছড়ির কল্প রঞ্জন চাকমাকে প্রথম পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য করেন।

এসব পরিবর্তনের ভেতরেই পাহাড়ে ভিন্ন চিত্র দেখা দেয়। জেএসএসের ভেতরে আন্তঃকোন্দল শুরু হয়। এছাড়া প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য বিভক্ত হয়ে চারটি আঞ্চলিক সংগঠন গড়ে উঠে। এগুলো হলো - জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), জেএসএস সংস্কার, ইউনাইটেড পিপল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)।

আধিপত্য বিস্তার ও গ্রুপিংয়ের কারণে আর শান্তি ফেরেনি পাহাড়ে। প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ, অপহরণ আতঙ্কে থাকতে হয় পাহাড়ে বসবাসকারীদের। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এরই মধ্যে ৪ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। আর শান্তিচুক্তির পর থেকে এ পর্যন্ত আট শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

পার্বত্য এলাকার বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর দাবি, তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের পণ্য বেচাকেনা ও আনা-নেওয়া করতে দ্বিগুণ চাঁদা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু তারা ভয়ে মুখ খুলতে চায় না।

তবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নেতাদের বক্তব্য বিগত সরকার ৭২টি ধারার ৪৮টি পূর্ণাঙ্গ এবং ১৫টি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। ধারার দুই-তৃতীয়াংশ বাস্তবায়ন হয়নি। যদি পূর্ণ বাস্তবায়ন হয় তবে হয়তো পাহাড়ে ভাতৃঘাতী এরূপ সংঘাত হতো না।

সাবেক সাংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান খাগড়াছড়ি বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়া বলেন, তবে শান্তিচুক্তির নামে পাহাড়িদের সাথে ধোঁকাবাজি করেছে হাসিনা সরকার। এই চুক্তির ফলে সংঘর্ষ ও বিভেদ বেড়েছে। 

তিনি বলেন, শান্তিচুক্তি করে শান্তিতে নোবেল পাওয়ার আশা করেছিল। কিন্তু এখানে চুক্তির ফলে রক্তের বন্যা বয়ে গেছে। হানাহানি, মারামারি ও সংঘাত বেড়েছে। এই চুক্তি সংবিধান পরিপন্থি। এ চুক্তি একটা দেশের মধ্যে আলাদা রাষ্ট্র সৃষ্টির শামিল। এ চুক্তি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। 

ওয়াদুদ ভূইয়া বলেন, চুক্তি বাতিলের জন্য বর্তমান সরকারকে আমরা অনুরোধ করব। চুক্তি বাতিলের জন্য আমরা আহ্বান জানাব। তাছাড়া যে আওয়ামী লীগ এই চুক্তি করেছে তারা কিন্তু ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকেও ৭২টি ধারার কোনো অংশই পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করেননি। এতে পাহাড়ে অস্ত্রের ব্যবহার ও অশান্তি আরো বাড়িয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চুক্তিটা এতই বৈষম্যমূলক, রাষ্ট্র যে অধিগ্রহণের ক্ষমতা রাখে সেটাও কেড়ে নিয়ে এখানকার আঞ্চলিক পরিষদকে দিয়েছে। সেনাবাহিনীর কোথাও যেতে হলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাগে। এই চুক্তিতে পাহাড়ের আঞ্চলিক পরিষদের যারা সুফলভোগী তাদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছে। এই চুক্তি যে কতটা ভয়ংকর সেটা অল্প কথায় বলে শেষ করা যাবে না।

অতএব এই চুক্তি কোনোভাবেই মানা যাবে না। এটা বৈষম্যমূলক ও সংবিধান পরিপন্থী। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের এক দশমাংশ ভূমিকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার সিঁড়ি। এটাকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে দেওয়া যাবে না। তাহলে সমগ্র বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এসবি/ওএফ/এমআই

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর