তদন্ত কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার অভিযোগ মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৫

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার হরিপুর কালিতলা বিলের ইজারা নিয়ে আদালতের নির্দেশে তদন্তে গিয়ে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান। এ ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছেন উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাইমুল হক। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাইমুল হক তদন্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমানকে মারতে তেড়ে আসছেন।
জানা গেছে, হরিপুর কালিতলা বিলটি ২৭ মার্চ টেন্ডারের মাধ্যমে লিজ পায় নামোনিমগাছি হরিপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। কিন্তু এ লিজ প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি তুলে আদালতে মামলা করেন পূর্বের লিজধারী হরিপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সহসভাপতি শান্ত হাওলাদার। আদালতের নির্দেশে বিলটি সরেজমিন তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে ছিলেন, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোসা. এলিজা খাতুন, সমবায় কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান এবং সমাজসেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন দাশ।
গত ২১ এপ্রিল বুধবার তদন্ত কমিটি বিলে তদন্ত করতে গেলে সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা নাইমুল হক সেখানে উপস্থিত হন, যদিও তিনি তদন্ত কমিটির সদস্য ছিলেন না। তিনি তদন্ত কাজে বাধা দেন এবং উপস্থিত কর্মকর্তা আনিসুর রহমানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মারধরের চেষ্টা করেন। ঘটনার সময়ের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. তাসমিনা খাতুন বলেন, ‘ঘটনাটি সত্য, ভিডিওটিও আমি দেখেছি। একজন সরকারি কর্মকর্তার এমন আচরণ লজ্জাজনক। প্রশাসন এ ঘটনায় বিব্রত।’
তদন্ত কর্মকর্তা (উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা) আনিসুর রহমান বলেন, ‘তদন্তের সময় সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা নাইমুল হক উত্তেজিত হয়ে আমাকে গালাগাল করেন। মারার জন্য তেড়ে আসেন। তখন সমাজসেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন দাশ তাকে নিবৃত্ত করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আদালতের নির্দেশে বিলে তদন্তে গেলে উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা নাইমুল হক তদন্ত কমিটির সদস্য না হয়েও উপজেলা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে উপস্থিত হয়। তদন্ত কাজে বাধা প্রদান করেন। তিনি আমার সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন। আপনারা ভিডিওতে দেখেছেন, ওনি আমাকে মারতে তেড়ে আসেন।’
এ বিষয়ে বারবার ফোন দিলেও সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এলিজা খাতুন ফোন রিসিভ করেননি।
সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা নাইমুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তুমি দুই দিনের সাংবাদিক, তোমার কতটুকু ক্ষমতা আছে বলো... পারলে কিছু করে নিও। সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোসা. এলিজা খাতুন পিএইচডি করা লোক। পারলে ওনারও কিছু করে নিও।’
নাইমুল হকের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক অভিযোগ ছিল। স্থানীয়রা জানান, তিনি পদ্মা-মহানন্দা নদীতে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ শিকার করে তা বিক্রি করেন, সরকারি বিলে শেয়ার নেন এবং ইজারাদারদের কাছ থেকে ঘুষ আদায় করেন। এমনকি বিভিন্ন পুকুর-বিলে লিজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে অর্থ গ্রহণেরও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, এ ঘটনার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রশ্ন উঠেছে, ‘কে এই নাইমুল হক? তার খুঁটির জোর কোথায়?’
স্থানীয় মৎস্যজীবী সাদিরুল ইসলাম বলেন, ‘নাইমুল হক ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে কাজ করেছে। পুকুর-বিলের নামে সাধারণ মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেয়। আমরা তার অপসারণ ও শাস্তি দাবি করছি।’
বদিউজ্জামান/এমজে