Logo
Logo

সারাদেশ

মহাসড়ক যেন দাবি আদায়ের মাঠ, বিপাকে শিল্পাঞ্চলবাসী

Icon

হাসান ভুঁইয়া, আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩

মহাসড়ক যেন দাবি আদায়ের মাঠ, বিপাকে শিল্পাঞ্চলবাসী

শিল্পাঞ্চল এলাকার মহাসড়ক যেন দাবি আদায়ের মাঠ /ছবি : বাংলাদেশের খবর

শিল্পাঞ্চল এলাকার মহাসড়ক যেন দাবি আদায়ের মাঠ। বেতন-ভাতা বকেয়া কিংবা হামলার প্রতিবাদ, যাই হোক না কেন দাবি আদায়ে সড়কে অবস্থানের চেয়ে ভালো কোনো মাধ্যম মনে হয় আর নেই। দাবি আদায় না হওয়ায় টানা ৫৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধের রেকর্ডও রয়েছে শিল্পাঞ্চল খ্যাত আশুলিয়ায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দাবি আদায়ের যে পরিমাণ কর্মসূচি সারাদেশে দেখা গেছে তাতে মনে হয় দেশে এখন দাবি আদায়ের মৌসুম চলছে। এতে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া।

চার বছর আগে বন্ধ হওয়া কারখানার পাওনা আদায়ের দাবিতে গেল মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকালে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ-মিছিল শুরু করে ডিইপিজেডের লেনি ফ্যাশন লিমিটেড ও লেনি অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা। এরপর সেই আন্দোলন গড়ায় ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত। দীর্ঘ সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যে জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের বাইপাইল ফল আড়ত এলাকায় সড়কের যানজট নিরসন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয় দুই শিক্ষার্থী। ঘটনার খবর পেয়ে বাইপাইলে এসে সড়কে অবস্থান নেয় অন্যান্য শিক্ষার্থীরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এই সড়কে চলাচলরত যানবাহন ও যাত্রীরা পড়েন চরম বিপাকে। শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি চলে রাত ২টা পর্যন্ত।

এছাড়াও চলতি মাসের ১৬, ১৭, ১৯, ২০ ও ২৫ তারিখ বকেয়া বেতনের দাবিতে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিকরা। ওই দিনগুলোতেও সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।

এর আগে, ২১ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে বকেয়া বেতনের দাবিতে আশুলিয়ার নবীনগর–চন্দ্রা সড়কের বাইপাইল মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনের শ্রমিকরা। ওই সময় সড়কটি অচল হয়ে পড়ে। তাদের এই কর্মসূচি চলে টানা ৩১ ঘণ্টা। ২২ অক্টোবর বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে শ্রমিকদের সরিয়ে দেয়। এরপর যান চলাচল পুনরায় শুরু হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়কের প্রায় অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে।

আর সেপ্টেম্বরের শেষদিন সোমবার ৯টার দিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা। ওই কর্মসূচি চলে টানা ৫৩ ঘণ্টা। পরে সেনাবাহিনী কারখানার মালিককে গ্রেপ্তার করে। এ খবরে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে কারখানার সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। দীর্ঘ ৫৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধের সাক্ষী হয় শিল্পাঞ্চলবাসী।

এছাড়াও গত তিন মাসে আশুলিয়ার নরসিংহপুর-নিশ্চিন্তপুর, জিরাবো এলাকার নাসা গ্রুপ, মন্ডল গ্রুপ, লুসাকা, ইথিক্যাল গার্মেন্টস ও আশুলিয়ার বাইপাইল শাহরিয়ার গার্মেন্টস ও ডংলিয়নসহ বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। গত কয়েক মাসে দফায় দফায় সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

পরিবহন চালকরা বলেন, আমরা কাঁচামালসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল বোঝাই ট্রাক নিয়ে যাতায়াত করি। অনেক সময় সড়কে আটকে থাকার কারণে কাঁচামাল পচে যায়। মাল সময়মতো পৌঁছাতে না পারলে লোকসান দেখিয়ে মালিকরা ভাড়া দিতে চান না। অন্যান্য সমস্যা তো আছেই। এ ধরনের সড়ক অবরোধ থেকে মুক্তি চাই।

বাইপাইল কাঁচামাল আড়তের ব্যবসায়ী মো. জামালউদ্দিন বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁচামাল এনে পাইকারি বিক্রি করি। বেশিরভাগ সময় ট্রাকে আনা-নেওয়া করা হয়। সড়ক অবরোধের ফলে কাঁচামাল রাস্তায় পচে যায়। এতে বেশ লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। আমরা এর থেকে মুক্তি চাই। 

সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সওগাতুল আলম বলেন, সড়ক অবরোধ থাকলে চাপ অনেক বেড়ে যায়। পরিবহন চালকদেরকে বিকল্প সড়কে চলাচলের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। দীর্ঘ অবরোধের ফলে সড়কে বিশাল যানজট দেখা দেয়া। তা নিরসনেও আমাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বর্তমানে থানায় জনবল কম। তাই আশুলিয়ার মতো জনবহুল এলাকায় কোনো সমস্যা দেখা দিলে শিল্প-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্যান্য সংস্থার সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করি। ফলে সমস্যা সমাধান করতে সময় লেগে যায়। 

বর্তমানে যেসব আন্দোলন চলছে, তাতে অনেকের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিকদের সাথে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করি। অনেক সময় মালিক পক্ষের কারণে সমাধান করতে দেরি হয়। আগামীতে যেন এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে তার জন্য সকল কারখানা মালিকদেরকে যথা সময়ে বেতন-ভাতা পরিশোধের ব্যাপারে বলেছি। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও সবসময় প্রস্তুত। 

ওএফ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর