Logo
Logo

সারাদেশ

আ.লীগকে নির্বাচনের সুযোগ দিলে কমিশন ঘেরাও : রাশেদ খাঁন

Icon

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:৩০

আ.লীগকে নির্বাচনের সুযোগ দিলে কমিশন ঘেরাও : রাশেদ খাঁন

গণহত্যার বিচারের আগে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেছেন, ‘যদি সরকার বলে সুযোগ দিবে, তাহলে আমরা এক লক্ষ নেতাকর্মী নিয়ে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করবো।’

তিনি বলেন, ‘দুই হাজার মানুষ শহীদ হয়েছে। তার বিচারের আগে সব মাফ করে দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে নিয়ে আসা হবে, এতে আমরা বসে থাকবো না। আমরা প্রতিবাদ করবো, প্রতিরোধ করবো। বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের দোসররা কেউ রাজনীতি করতে পারবে না।’

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর ) বিকেলে ঝিনাইদহ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে সম্প্রীতির বাংলাদেশ গঠন ও রাষ্ট্র সংস্কারে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রাশেদ খাঁন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি খুনি দল, মাফিয়া দল। এই নামটি এখন পচে গিয়েছে। এই নাম ব্যবহার করে বাংলাদেশে আর কোনো রাজনীতি চলবে না। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা যদি স্বতন্ত্র কিংবা ডামি পরিচয়েও নির্বাচনে আসতে চায়, তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।’

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে রাশেদ খাঁন বলেন, ‘ভারতে বসে শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্র করছে। সেই ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়ে রাস্তায় নামলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আপনাদের গ্রেপ্তার করবে। তাই হাসিনার ভালোবাসায় আর সিক্ত হয়েন না। আপনাদের ভালোবাসলে শেখ হাসিনা পালাতো না। সুতরাং তার প্রতি সব মায়া-ভালোবাসা ভুলে আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিন।’

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কোনো সাধারণ কর্মী যদি রাজনীতি করতে চান, নতুন একটি দল খুলুন, সেই দলের নিবন্ধন নেন, তারপর নির্বাচন করেন। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যারা আওয়ামী লীগের নির্বাচনে ডামি প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছেন, এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন তারা কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।’

রাশেদ খাঁন বলেন, ‘যারা ভারতে বসে নাটাই ঘুরায়, বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে নাক গলায়, দিল্লিতে বসে বাংলাদেশে কে ক্ষমতায় আসবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের ষড়যন্ত্র আর কুটপরিকল্পনা রুখে দিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মোদীর আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলন আমরাই করেছিলাম। দিল্লির কসাই মোদীর হাতে মুসলমানদের রক্ত লেগে আছে। তাকে প্রতিহত করতে সেদিন গণঅধিকার পরিষদ মাঠে নেমেছিল এবং জেল জুলুমের শিকার হয়েছিল।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাশেদ খাঁন বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের অন্যতম অংশীদার গণঅধিকার পরিষদ। স্বৈরাচার হাসিনার পতনের জন্য আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছি। কিন্তু আজ আমরা একদল আরেক দলের, এক নেতা আরেক নেতার পেছনে লাগছি। এটা চলতে থাকলে আমাদের গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যাবে।’

মানবতাবিরোধী গণহত্যাকারী হাসিনা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অডিও ফাঁসের মাধ্যমে তারা নাটক করছে। এটা স্বৈরাচারের ফিরে আশার অপকৌশল। এই নাটক বন্ধ করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।’ ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমে পতিত স্বৈরাচার হাসিনার অডিও প্রচার বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

ভারত অপপ্রচার চালাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলিম মিলেমিশে বসবাস করছে। ভারতের নীলনকশায় ইসকনকে দিয়ে আমাদের একজন আইনজীবীকে হত্যা করেছে। তারা ফাঁদ পেতেছিল। ভারত ও হাসিনার সেই ষড়যন্ত্র দেশের মানুষ রুখে দিয়েছে। ভারতের ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরাজিত হয়েছে। সনাতনী ভাই-বোনেরা শেখ হাসিনার উসকানিতে পা দেবেন না।’

মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সাংবাদিক ভাইয়েরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে হাত খুলে লিখতে পারেননি। এখন আবার ঝিনাইদহে সেই দিন চলছে। সাংবাদিকরা আজও ভয় পাচ্ছেন সত্য নিউজ প্রকাশ করতে৷ আওয়ামী লীগ পালিয়েছে, কিন্তু নতুন করে চাঁদাবাজি চলছে। কাউকে ভয় পাবেন না, যে অন্যায় করবে, তার বিরুদ্ধে লিখতে হবে।’

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাবশালী কাউকে ভয় পাবেন না৷ রাষ্ট্র সংস্কার ও দুর্নীতির নির্মূলে সবার কণ্ঠস্বর জাগ্রত করতে হবে। ঝিনাইদহে এখন যারা আওয়ামী আমলের মতো লুটপাট, দুর্নীতি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি নতুন রাজত্ব শুরু করেছে, তাদের রুখে দিতে হবে।’

দলীয় পরিচয়ে কোনো অপরাধ বরদাস্ত করা হবে না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সুযোগ আছে রাজনীতি করার। স্কুল কলেজের সভাপতি, মসজিদ-মন্দিরের সভাপতি হওয়ার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে৷ জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করতে হবে।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের এ নেতা বলেন, ‘তিনি সর্বশক্তি দিয়ে ছাত্রদের সামাজিক আন্দোলনকে রাজনীতিকরণ করে হাসিনা পতন আন্দোলন ত্বরান্বিত করেন। তারেক রহমান একটি ইতিবাচক চিন্তার জায়গা থেকে আমাকে (রাশেদ খাঁন) সহায়তা করতে ঝিনাইদহ বিএনপি নেতাদের চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা হাইকমান্ডের এই চিঠির মর্মার্থ বুঝতে ভুল করে আমাকে অসহযোগিতা করে যাচ্ছেন। ঝিনাইদহ বিএনপি হাইকমান্ডের নির্দেশ মানছেন না। কার্যত তারা তারেক রহমানকেই মানেন না। তাহলে তারা কীসের দল করেন?’

তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘আমি এমপি-মন্ত্রী হওয়ার জন্য রাজনীতি করি না। আমরা এমপি মন্ত্রী তৈরি করি, এমপি-মন্ত্রী বানাই। গণঅধিকার পরিষদ ছাত্র আন্দোলনের কারখানা। তারা ক্ষমতায় যেতে রাজনীতি করে না, পরিবর্তনের জন্য আমরা রাজনীতি করি।’

রাশেদ খাঁন বলেন, ‘আমাকে সহায়তা করতে তারেক রহমানের এই চিঠি নিয়ে যারা নোংরা খেলায় মেতেছেন তার ছাত্র-জনতার বিপ্লবে বিশ্বাস করে না। এমনটি করলে বিপ্লব ব্যর্থ হবে। ফ্যাসিবাদী শক্তির উত্থান ঘটবে। তখন কেউ রেহাই পাবেন না। এ থেকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ঝিনাইদহের হাসপাতালে নানামুখী সংকট রয়েছে, এগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। ইনশাআল্লাহ ঝিনাইদহে নতুন ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করব।’

গণঅধিকার পরিষদ ঝিনাইদহ জেলা কমিটি আয়োজিত মতবিনিময় সভায় জেলার সভাপতি প্রভাষক সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম আশিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক বিল্লাল হোসেন, গণঅধিকার পরিষদের ঝিনাইদহ জেলার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল জাহিদ রাজন, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন কবির, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আশিক ইকবাল, জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের রিহান প্রমুখ।

এম বুরহান উদ্দীন/এমএইচএস 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর