Logo
Logo

সারাদেশ

দখলদারদের কবলে চিত্রা নদী

Icon

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৪৩

দখলদারদের কবলে চিত্রা নদী

ছবি : বাংলাদেশের খবর

দখলদারদের কবলে চলে গেছে ঝিনাইদহের চিত্রা নদী। দখলকারীরা নদীর দুই পাড়ে গড়ে তুলেছে একাধিক স্থাপনা। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যে যার মতো করেছেন নদীর জমি দখল। ফলে এক সময়ের প্রমত্তা নদী চিত্রা তার যৌবন হারিয়েছে। 

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে ছোট-বড় ১২টি নদী। এর মধ্যে চিত্রা নদী অন্যতম। যার দৈর্ঘ্য ৫৭ কিলোমিটার। নদীটির মোট দৈর্ঘ্য ১৭১ কিলোমিটার। একসময় যেখানে মিলত নানা জাতের মাছ, চলত বড় বড় নৌকা। কিন্তু এখনকার চিত্র একেবারেই উল্টো। নদীর বুকে জেগে উঠেছে বড় বড় চর। 

ময়লা-বর্জ্য ফেলার কারণে কমেছে মাছ। চিত্রা নদীসহ বিভিন্ন নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে কমছে নদীর প্রশস্ততা, সেই সঙ্গে জলজ প্রাণিও হুমকির মুখে। এসবের বিরুদ্ধে গত দেড় যুগেও নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটি, কোটচাঁদপুর উপজেলার দোড়া, কালীগঞ্জ উপজেলা শহর হয়ে তত্বিপুর ও মালিয়াট ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত চিত্রা নদী যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা হয়ে নড়াইলে গিয়ে মিশেছে। এ নদীর উৎপত্তিস্থল চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ অংশে বেশিরভাগ নদী জুড়েই অবৈধ স্থাপনা ও শত শত পুকুর রয়েছে। নদীর তীরবর্তী বাজার এলাকায় অবৈধ দোকানপাট ও বাড়িঘর তৈরি করেছে দখলবাজরা। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না, জিয়ানগর, বংকিরা, হাজরা, লক্ষ্মীপুর, মোহাম্মদপুর ও গোবিন্দপুর এলাকায় নদীবক্ষে পুকুর কেটে মাছ চাষ করা হচ্ছে। 

কোটচাঁদপুরের তালসার, ইকড়া, কালীগঞ্জ শহরের পুরাতন বাজার, বলিদাপাড়া, হেলাই, নিমতলা, নদীপাড়া ও ফয়লা এলাকায় দখল হয়ে গেছে চিত্রা। নদীর বুকে চাষাবাদ করছে মানুষ। নদীর মাটি কেটে ব্যক্তিগত কাজেও লাগাচ্ছেন কেউ কেউ। কালীগঞ্জ শহরে অনেকে দোকানপাট নির্মাণ করে ব্যবসায়িক কাজ পরিচালনা করছেন। 

অনেকে বসতবাড়ি নির্মাণ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। এ কারণে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ হারিয়ে তা ক্রমশই ক্ষীণ হয়ে গেছে। এখন এক কালের খরস্রোতা চিত্রা নদী এখন মৃতপ্রায়। অবৈধ দখলদাররা প্রতিনিয়তই গ্রাস করে চলেছে চিত্রা নদীর দুই পাড়। অব্যাহত দখলের কারণে চিত্রা নদী পরিণত হয়েছে শীর্ণ খালে। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই এই উপজেলায় চিত্রা নদীর অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এবং সচেতন মহল।

জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে এ নদীতে কিছু পানি থাকলেও শীতকালে অধিকাংশ জায়গায় জেগে ওঠে চর। আবার নদীর যে অংশে পানি থাকে সেখানকার স্থানীয় লোকেরা নদীতে বাঁধ দিয়ে রাখেন। ফলে বন্ধ হয়ে যায় পানির প্রবাহ। কালীগঞ্জের সিংদহ গ্রামে নদীর মধ্যে ৮টি পুকুর কেটে প্রভাবশালীরা মাছ চাষ করছেন। ফলে এক সময়ের প্রমত্তা নদী চিত্রা তার যৌবন হারিয়ে মৃতপ্রায়। দখলবাজদের কারণে নদীর কোথাও সরু, কোথাও মৃত হয়ে রয়েছে।

তবে সম্প্রতি চিত্রা নদী দখল ও দুষণ রোধে এসব স্থাপনা অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড। যার ৯৪টি স্থাপনা ও পুকুর 'অবৈধ' হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পানিসম্পদ উপদেষ্টার নির্দেশে ইতোমধ্যে দখলবাজদের চিহ্নিত করে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। 

আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে চিত্রা নদীর বুকে গজিয়ে ওঠা এসব অবৈধ স্থাপনা, পুকুর ও বাঁধ উচ্ছেদ করা হবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। নদীটি দখলমুক্ত করা গেলে এক সময়ের প্রমত্তা নদীটি আবারও প্রাণ ফিরে পেতে পারে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা। 

চিত্রা নদীতে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে ঝিনাইদহের মানবাধিকার কর্মী অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান টুকু বলেন, ‘চিত্রা নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত খুবই যুগান্তকারী। জেলার নদ-নদীগুলো বাঁচানোর এখনই উপযুক্ত সময়। কারণ রাজনৈতিক সরকারের আমলে প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা থাকে। ফলে প্রভাবশালীদের নগ্ন হস্তক্ষেপে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। এখন সেই আশঙ্কা কম।’

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন, ‘প্রতিটি জেলায় একটি করে নদী দূষণ ও দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই হিসেবে ঝিনাইদহ জেলায় চিত্রা নদীকে বেছে নেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে দখলদারদের চিহ্নিত করে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। নদীর বেশিরভাগ অংশ কোটচাঁদপুর ও কালীগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত। চিত্রা নদীর ৩০ কিলোমিটারে ৯৪টি অবৈধ স্থাপনা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভবন, পুকুর, দোকান, বাজার, ঝুলন্ত স্থাপনা ও মুরগির খামার। উচ্ছেদের আগে স্থাপনার মালিক ও কর্তৃপক্ষকে আমরা নোটিশ দিয়ে জানাব। মাইকিং করেও প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে।’

হালনাগাদ তথ্যমতে, চিত্রা নদীর কালীগঞ্জ অংশে ৬২টি, কোটচাঁদপুরের লক্ষ্মীপুর বাজারে ১১টি ও একই উপজেলার ধোপাবিলা গ্রামে ২১টি স্থাপনা ও পুকুর উচ্ছেদের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতেই এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। 

এম বুরহান উদ্দীন/এমজে

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর