চুয়াডাঙ্গায় শীতের দাপট, তাপমাত্রা নামল ১০ ডিগ্রিতে
জেলা প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৯
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায় গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রার পারদ নামতে শুরু করেছে৷ হিমেল বাতাসের দাপটে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। হাড় কাঁপানো শীত আর কুয়াশার সাথে হিমশীতল বাতাসের ঝাপটায় জীবনযাত্রায় নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ। এতে খেটে খাওয়া দিনমজুর শ্রমিকরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, আজ বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। চলতি মৌসুমে জেলায় এটিই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। কয়েকদিনের মধ্যেই মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে।
শ্রমিকরা বলছেন, শীতের তীব্রতা বাড়লেও এক প্রকার বাধ্য হয়েই তাদের কাজ করতে হচ্ছে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, তাতে একদিন কাজ না করলে সংসার চলবে না। তাই ভোর থেকেই এক প্রকার বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে কাজে যেতে হচ্ছে। এতে অনেকেই শীতজনিত রোগে আক্রান্তও হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শীতজনিত রোটা ভাইরাস ও আবহাওয়াজনিত কারণে আক্রান্ত হয়ে জেলার সদর হাসপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। এতে চিকিৎসক ও নার্সদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে তিন শতাধিক ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই হলো শিশু ও বয়োবৃদ্ধ রোগী। এছাড়া প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় ৪০০-৫০০ শতাধিক রোগী।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রকিব সাদী।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) রাতে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া শিশুর মা পলি খাতুন বলেন, গত চারদিন যাবত আমার আট মাসের ছেলে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। রোগীর এতো চাপ যে এখানে থাকতেই সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। সিট পাইনি, ঠান্ডায় মেঝেতেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা শহরের কলেজপাড়ার কাজে আসা আব্দুস সালাম নামের এক রাজমিস্ত্রী বলেন, সকাল সাড়ে ৬টার কাজে এসেছি। কুয়াশা ও বাতাসের কারণে কাপুনি ধরে যাচ্ছে। কিছুই করার নেই। পেটের দায়ে কাজে আসতেই হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের যে দাম তাতে একদিন কাজে না এলে খাবার জুটবে না। তাই বাধ্য হয়েই কাজে আসতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা শহরের রিকশাচালক জালাল উদ্দিন বলেন, রাতে রিকশা চালাই, দিনে বিশ্রাম করি। গত দুদিন যাবত একটু বেশিই শীত অনুভূত হচ্ছে। এরমধ্যে আজ রাতে বাতাসের কারণে শরীর কাপুনি ধরে যাচ্ছিল। হাত-পা যেন বরফ হয়ে যাচ্ছিল। এ রকম হলে রাতে রিকশা চালানোই মুশকিল হয়ে পড়বে।
অপরদিকে, শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে চুয়াডাঙ্গা শহরের ফুটপাতে পুরাতন কাপড়ের দোকানগুলোতে ভীড়। শহরের কোর্টমোড়, পোস্ট অফিস, মাছপট্টি, কলেজ রোড, গার্লস স্কুলের সামনেসহ বেশ কিছু স্থানে ফুটপাতে পুরাতন গরম কাপড় বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাতের এসব দোকানের বেশিরভাগ ক্রেতাই নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। তাদের অধিকাংশই দিন আনে দিন খায়। শপিংমলে মূল্যে বেশি হওয়ায় অনেক সময় সব শ্রেণির ক্রেতাদেরও দেখা মিলছে এসব দোকানে।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি গার্লস স্কুলের সামনের পুরাতন কাপড় বিক্রেতারা জানান, প্রতিবছরই এই সময়ে শীতের কাপড় বিক্রি করেন তিনি। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। সাধারণত যারা নামীদামি মার্কেট থেকে গরম কাপড় কিনতে পারে না তারাই ভীড় জমায় দোকানে। শীত বাড়লে ব্যবসা ভালো হয়। সব শ্রেণির মানুষ এখান থেকে কাপড় কেনেন। গত বছর পুরাতন কাপড় কেনা হতো যে দামে, এ বছর তার দাম বেড়েছে অনেক। অনেক কাপড় আবার নষ্ট থাকে। এসব কারণে এবার গরম কাপড়ের দাম এবার একটু বেশিই।
শীতের কাপড় কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, কম দামে পাওয়ার আশায় এখানে আসা। তবে এ বছর দাম একটু বেশি হলেও বাজারের তুলনায় কমই। বাচ্চাদের জন্য ২২০ টাকায় চারটি শীতের কাপড় কিনেছি।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যৈষ্ঠ পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে।
ওএফ