শীতে কাঁপছে পঞ্চগড়, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭
ছবি : বাংলাদেশের খবর
কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসে শীতে কাঁপছে উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়। গত তিনদিন ধরেই কুয়াশার আবরণে ঢেকে আছে এ জেলা প্রকৃতি। বৃষ্টির মতো ঝরছে হিমেল শিশির। হাড় কাঁপানো শীত ও কুয়াশার সঙ্গে হিমশীতল বাতাসের কারণে জনজীবনে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ। নিম্ন আয়ের মানুষরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিকেল ৩টায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ভোরে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকলেও সকাল ৯টার পর দেখা মিলেছে সূর্যের। কুয়াশার কারণে ভোরে সড়কগুলোতে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে গেছে। বৃষ্টির মতো ভেজা দেখা যায় সড়কগুলো। শীত উপেক্ষা করেই জীবিকার তাগিদে কাজে বেড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিক, দিনমজুর, কৃষক থেকে বিভিন্ন পেশার মানুষদের।
শফিকুল ও দেলোয়ার নামের দুই ভ্যান চালক জানান, তিনদিন ধরেই কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাসে কাহিল অবস্থা। ভ্যান চালানোর সময় বাতাসের কারণে শরীর কাঁপুনি ধরে হাত-পা যেন বরফ হয়ে আসে। সর্দি-জ্বর হয়ে যাচ্ছে। প্যাসেঞ্জার নাই, আয় রোজগারও নাই। বিপদে আছি। এভাবে চলছে জীবন চালানো মুশকিল হয়ে পড়বে।
পাথর শ্রমিক জয়নব বেগম ও ফিরোজা বেগম বলেন, কাজে যাওয়ার কারণে ভোরে উঠতে হয়। এত ঠান্ডা, ঘরে আনা পানিও বরফ হয়ে ওঠে। পরিবারের রান্নাবান্না শেষ করে কাজে বের হতে হয়। মন চায় না এত ঠান্ডায় কাজে যেতে। কিন্তু উপায় নাই, ঠান্ডায় ঘরে বসে থাকলে তো খাবার জুটবো না। শীতবস্ত্র নাই।
এদিকে এবার হাটবাজারের ফুটপাতে সেভাবে গড়ে ওঠেনি পুরোনো কাপড়ের দোকান। যেসব দোকান বসেছে, সেখানে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শীতের কাপড়। তাই বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের মানুষ তা কিনতে পারছেন না। এবার এখনো সেভাবে সরকারি-বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ চোখে পড়েনি।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলায় মাত্র ২ হাজার কম্বল বরাদ্দ পেয়েছেন। তা বিতরণ করা হয়েছে। এজন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও সমাজের বিত্তশালীদের শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
শীতের কারণে বেড়েছে শীতজনিত রোগব্যাধি। জেলার সদরসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শিশু ও বয়স্করা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা শীতে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।
পঞ্চগড়ের প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ জানান, বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বিকেল ৩টায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা বাড়লেও কুয়াশা ও হিমবাতাসের কারণে শীতের প্রকোপে পড়েছে এ উত্তরের জনপদ।