চলতি রবি মৌসুমে নওগাঁ জেলায় মোট ৭০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। আবহাওয়া ভালো থাকলে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। সরিষার ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় কৃষকরা আশায় বুক বাঁধছেন। সেই সঙ্গে ভালো দামের প্রত্যাশা রয়েছে তাদের।
চলতি মৌসুমে জেলার কৃষকরা স্থানীয়ভাবে ব্যাপকভাবে বারী সরিষা-১৪, বারী সরিষা-১৭, ১৮, ১৯, টরী-৭, বীনা-৪, ১৮, ও বীনা-১৭ জাতের সরিষার চাষ করেছেন। তবে গত বছরে ফলন ভালো হওয়ার কারণে কৃষকরা বারী সরিষা-১৪ বেশি লাগিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বারী সরিষা-১৪ বিঘা প্রতি ১০-১২ মন, টরি সরিষা-৭ প্রতি বিঘা ৬-৮ মন এবং বীনা জাতীয় সরিষা ৬-৭ হারে ফলন হতে পারে বলে কৃষকরা মনে করছেন। সরিষার বর্তমান বাজার দর মণপ্রতি ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার টাকা হলেও নতুন সরিষা ওঠার সময় এর দাম কিছুটা কমে মণ প্রতি ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা মণ হতে পারে বলে কৃষকরা মনে করছেন।
তারা সরিষার ক্ষেত দেখে খুশি হলেও দাম নিয়ে কিছুটা চিন্তায় আছেন। তবে বর্তমান যে বাজার দর রয়েছে তা থাকলে তাদের কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান তারা। কোনো কারণে দাম কম হলে সরিষা চাষ করতে যে খরচ হয়েছে, তা মিটিয়ে নিজের কাছে অবশিষ্ট কিছুই থাকবে না বলে মনে করছেন তারা।
জেলার মান্দা গনেশপুর গ্রামের কৃষক করিম হোসেন, পোরশা উপজেলার সরিষাচাষী তাহের আলী ও লোকমান আলী জানান, তাদের লাগানো সরিষার ক্ষেত খুব ভালো হয়েছে। তারা আশা করছেন, ফলনও ভালো হবে। কিন্তু দাম ভালো হবে কিনা চিন্তা করছেন। তবে ভালো ফলনের পাশাপাশি দাম পেলে অনেকেই সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকবেন বলে তাদের আশা।
উল্লেখ্য, ২০২৪-২০২৫ চলতি মৌসুমে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৭ মেট্রিকটন সরিষা উৎপাদিত হবে বলে কৃষি বিভাগের আশা। সরিষা চাষে আগ্রহী করে তুলতে জেলায় ৫৭ হাজার প্রান্তিক কৃষককে সরকারি প্রণোদনার অংশ হিসেবে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হবে হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রণোদনার আওতাভুক্ত জেলার প্রত্যেক প্রান্তিক সরিষা চাষিকে সরকারি প্রণোদনা হিসেবে এক বিঘা জমির বিপরীতে বিনামূল্যে ১ কেজি বীজ, ১০ কেজি এমওপি সার এবং ১০ কেজি করে ডিএপি সার দেওয়া হয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলাভিত্তিক সরিষা চাষের জমির পরিমাণ হচ্ছে নওগাঁ সদর উপজেলায় ৪ হাজার ৩৮০ হেক্টর, রানীনগরে ৭ হাজার ২৪০, আত্রাইয়ে ৬ হাজার ৭৬৫, বদলগাছিতে ৩ হাজার ৩৯০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর, পত্নীতলায় ৬ হাজার ৯২০, ধামইরহাটে ৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর, সাপাহারে ৬ হাজার ৭১০, পোরশায়, ৮ হাজার ২৩০ হেক্টর, মান্দায় ৮ হাজার ২১৫ হেক্টর এবং নিয়ামতপুর উপজেলায় ৮ হাজার ৪৫০ হেক্টর।
কৃষি বিভাগ বলেছে, প্রণোদনাপ্রাপ্ত প্রত্যেক কৃষককে ১১৫ টাকা মূল্যের ১ কেজি বীজ, ১৯০ টাকা মূল্যের ১০ কেজি এমওপি সার এবং ২১০ টাকা মূল্যের ১০ কেজি ডিএপি সার বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যেক কৃষকের অনুকূলে দেওয়া বীজ ও সারের আর্থিক মূল্য ৫২৫ টাকা। সেই হিসেবে প্রণোদনা পাওয়া জেলার ৫৭ হাজার কৃষকের অনুকূলে দেওয়া বীজ ও সারের মোট আর্থিক মূল্য ২ কোটি ৯৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আবহাওয়া ভালো থাকার কারণে সরিষা ক্ষেত খুব ভালো দেখা যাচ্ছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। কৃষকরা ভবিষ্যতে সরিষা চাষের প্রতি আগ্রহ দেখাবেন বলে প্রত্যাশা করছি।’
এম এ রাজ্জাক/এমজে