ছেলে দুবাইয়ে, বৃদ্ধ বাবা থাকেন রাস্তার ঝুপড়ি ঘরে
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৩৩
পলিথিন আর ভাঙাচোরা টিনের ছাউনি দিয়ে মোড়ানো ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরের সামনে বসে রয়েছেন এক বৃদ্ধ। তৈরি করছেন তালপাতা দিয়ে হাতপাখা। আধুনিকতার ছোঁয়ায় যেখানে বড় বড় অট্টালিকায় বসবাস করছে মানুষ। সেখানে সড়কের পাশে ঝুপড়ি ঘরে ২৫ বছর ধরে বসবাস করছে ৬৫ বছর বয়সী পাচু মিয়া। ঝিনাইদহের সদর উপজেলার পাগলাকানাই-গান্না সড়কের বালিয়াখাল এলাকায় ওই ঝুপড়ি ঘরে থাকেন পাঁচু মিয়া। সেখানে তালের পাতা দিয়ে তৈরি করা হাত পাখা বিক্রি করেন তিনি। এছাড়া নরসুন্দরের কাজ করে নিজের ভরণপোষণ চালান পাঁচু মিয়া। তার ঘরে রয়েছে চুলাসহ রান্না করার বিভিন্ন সামগ্রী। বাজারের টিউবওয়েল থেকে পানি এনে নিজের প্রয়োজন মেটান তিনি।
জানা গেছে, ঝিনাইদহের সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে বাড়ি পাঁচু মিয়ার। নব্বইয়ের দশকে বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে বালিয়াখাল বাজারে সেলুনের দোকান দিয়েছিলেন তিনি। এই দোকান থেকে যা আয় হতো সেটা দিয়েই চালাতেন সংসার। গত ১০ বছর আগে পাঁচু মিয়ার মেয়ে নিমবিয়া মারা যান। পাঁচ বছর আগে মারা যান স্ত্রী সরভানু বেগম। এরই মধ্যে কষ্টের টাকায় ছেলে মিন্টু মিয়াকে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছিলেন পাঁচু মিয়া। সেখানে ৭-৮ বছর থাকার পর দেশে আসেন মিন্টু মিয়া। পরে মিন্টু মিয়া দুবাই চলে যান। এরপর থেকে মিন্টু মিয়ার সঙ্গে তার বাবা পাঁচু মিয়ার কোনো যোগাযোগ নেই।
পাঁচু মিয়ার প্রতিবেশী দুর্গাপুর গ্রামের বাবলু রহমান বলেন, ‘শারীরিকভাবে অসুস্থ পাঁচু মিয়া। তবুও কারো কাছে হাত পাতেন না তিনি। এই বয়সেও দিব্যি হাত পাখা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। নিজেই রান্না করে খাবার খান।’
গোলাম সরোয়ার মল্লিক নামে অপর প্রতিবেশী বলেন, ‘পাঁচু মিয়ার এক ছেলে দুবাই থাকে। তার মেয়েটা মারা গেছে। মাঝে মধ্যে স্ত্রীর কবর জিয়ারত করতে আসলে আমার সঙ্গে তার কথা হয় তার। পাঁচু মিয়া বলে, তার কোনো সুখ-শান্তি নেই। ছেলে ও বৌমা তার খোঁজ খবর নেয় না।’
গান্না এলাকার ভ্যানচালক জাফর বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি পাচু মিয়া ওই ঝুপড়ি ঘরেই থাকেন। তিনি নিজের মতো যা আয় করেন তাই দিয়েই চলে। কেউ সাহায্য দিতে গেলেও নেন না। আমরা চাই সরকার যেন তার একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেন।’
পাঁচু মিয়া বলেন, ‘ছেলে ও ছেলের বউ খোঁজ খবর নেয় না। মনের কষ্টে তাই বাড়িতে যাই না। নিজে যা আয় করি তা দিয়েই চলি। বর্তমানে হাত পাখা তৈরি ও নরসুন্দরের কাজ আমার ঘর চলে।’ তিনি আরো বলেন, ‘৩০ বছর আগে থেকে বালিয়াখাল বাজারে হাত পাখা বিক্রি করি ও নরসুন্দরের কাজ করি। এই কাজ করে যা আয় করেছিলাম সেই টাকা থেকে গুছিয়ে ছেলেকে বিদেশ পাঠাই। নিজের কাজ এখনো নিজেই করি।’
গান্না ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান সাব্দার আলী বলেন, ‘পাঁচু মিয়া ভালো মানুষ। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর লোকটা অসহায় হয়ে পড়েছে। ছেলে দুবাই থাকে। ছেলে ও বৌমা খোঁজ নেয় না পাঁচু মিয়ার। অসহায় পাচু মিয়ার জন্য স্থানীয় বিত্তশালীসহ সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিয়া আক্তার চৌধুরী জানান, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে ওই ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানো হবে।’
এম বুরহান উদ্দীন/এমবি