সাবেক বরগুনা-৩ আসন পুনর্বহালের দাবি
মাল্ডিমিডিয়া করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:৫৭
উন্নয়ন বঞ্চিত উপকূলীয় অঞ্চল সাবেক বরগুনা-৩ (আমতলী-তালতলী) আসন পুনর্বহাল সাড়ে তিন লক্ষ মানুষের প্রাণের দাবি। অবহেলিত এই অঞ্চলকে উন্নয়নের রোল মডেল গড়ে তুলতে আসন বিন্যাসের বিকল্প নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত এই আসনটি পুনর্বহালের দাবি উন্নয়ন বঞ্চিত আমতলী-তালতলীর জনগণের।
গত ৯ ডিসেম্বর নিবার্চন কমিশন বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলমের কাছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের জন্য প্রশাসনিক এলাকার সৃজন, বিয়োজন ও সংকোচনের তথ্যাদি পাঠাতে পত্র দিয়েছেন। আগামী ১৯ ডিসেম্বর নিবার্চন কমিশনে ওই পত্রের আলোকে তথ্যাদি পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন। ২০০৮ সালের ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের গেজেটে উল্লেখ রয়েছে, ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রশাসনিক সুবিধার বিবেচনায় বরগুনা-৩ (আমতলী-তালতলী) আসন বিলুপ্তির কোনো যুক্তি নেই। কিন্তু সেনা শাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নিবার্চন কমিশন ওই গেজেট অনুসরণ না করে বরগুনা-৩ আসন বিলুপ্তি করেছে। প্রমত্তা পায়রা ও বিশখালী দুটি নদী ঘিরে রেখেছে বরগুনার জেলার সংসদীয় আসন।
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের উপকূলীয় জেলা বরগুনা। এই জেলা ছয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। আয়তন ১৮৩১.৩১ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা ১০ লক্ষ ১০ হাজার ৫৩০ জন। বরগুনা জেলার দক্ষিণে কোনো ভূমি নেই। রয়েছে শুধু সমুদ্র, দিগন্ত বিস্তৃত অন্তহীন জলরাশি। ছয়টি উপজেলার মধ্যে তালতলী ও পাথরঘাটার পর আর কোনো জনপথ নেই। এরপর সমুদ্র ও জলরাশি। ১৯৮৪ সালে আমতলী, বরগুনা সদর, বামনা, পাথরঘাটা ও বেতাগী নিয়ে বরগুনা জেলায় উন্নীত হয়।
২০১০ সালের ৬ মে আমতলী উপজেলা থেকে তালতলী বিভক্ত হয়ে তালতলী উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। বরগুনা জেলার ছয়টি উপজেলাকে পায়রা (বুড়িশ্বর) ও বিশখালী নদীতে বিভক্ত করে রেখেছে। পায়রা নদীর পূর্ব পাড়ে আমতলী ও তালতলী উপজেলা। পশ্চিম দিকে বরগুনা সদর ও বেতাগী উপজেলা। বিশখালী নদীর পশ্চিম দিকে পাথরঘাটা ও বামনা উপজেলা। স্বাধীনতার পর থেকে বরগুনা জেলায় তিনটি সংসদীয় আসন ছিল। তৎকালীন সরকার বাহাদুর প্রমত্তা পায়রা ও বিশখালী নদীর ওপর ভিত্তি করে অবহেলিত বরগুনা জেলাকে তিনটি সংসদীয় আসনে বিভক্ত করেন।
বরগুনা সদর ও বেতাগী উপজেলা নিয়ে বরগুনা-১ আসন, পাথরঘাটা ও বামনা নিয়ে বরগুনা-২ আসন এবং আমতলী ও তালতলী নিয়ে বরগুনা-৩ আসন। সমবণ্টনের মাধ্যমে চলছিল তিনটি সংসদীয় আসনের উন্নয়ন। কিন্তু ২০০৮ সালে সেনা শাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার সরেজমিনে পরিদর্শন না করেই আওয়ামী লীগকে সুবিধা দিতে কাল্পনিকভাবে বরগুনা জেলার তিনটি সংসদীয় আসনকে ভেঙ্গে দুইটি সংসদীয় আসনে বিন্যস্ত করেন। বরগুনা সদর, আমতলী ও তালতলী উপজেলা নিয়ে বরগুনা-১ আসন এবং পাথরঘাটা, বেতাগী ও বামনা উপজেলা নিয়ে বরগুনা-২ আসন। এতে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়ে পরে সর্ব দক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চল আমতলী-তালতলী উপজেলা।
এই তিনটি উপজেলার মধ্যে প্রমত্তা পায়না ও বিশখালী নদী প্রবহমান। যার দৈর্ঘ্য ৯০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ প্রায় ৪ কিলোমিটার। পায়রা নদী পাড় হয়ে জনগণের সাংসদের সেবা নিতে হয়। যা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। তারপরে নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়। ফলে নির্বাচনের গ্রহণ যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।
আমতলী-তালতলী উপজেলা দেশের দক্ষিণের শেষ প্রান্তের সাগর পাড়ের উপকূলীয় উপজেলা। বন্যা, জলোচ্ছাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গেই যুদ্ধ করে উপকূলের জনপথের মানুষের বেঁচে থাকতে হয়। নিত্য নতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মিতালী করেই এই জনপথের মানুষের বসবাস। কিন্তু এই জনপথের অবহেলিত মানুষের দুঃখ দুর্দশা বোঝার মত জনপ্রতিনিধি নেই। তালতলী উপজেলায় রয়েছে আদিবাসী রাখাইন ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাস। এই উপজেলার উৎপাদিত তাঁতশিল্প তথা হস্ত শিল্প, মাছ ও ধান জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশার কারণে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হয়।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট গাজী মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রশাসনিক সুবিধার জন্য সাবেক বরগুনা-৩ (আমতলী-তালতলী) আসন পুনর্বহাল খুবই প্রয়োজন।
বাংলাদেশ বিমানের সাবেক ক্যাপ্টেন মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, সাবেক বরগুনা-৩ (আমতলী-তালতলী) আসন বিলুপ্ত করায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। তিনি আরও বলেন, নিবার্চন কমিশনে আমতলী-তালতলী উপজেলার মানুষের গণস্বাক্ষরসহ আবেদন জমা দিয়েছি।
সাবেক বরগুনা-৩ (আমতলী-তালতলী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ মল্লিক বলেন, আসন পুনর্বহালের প্রয়োজনীয়তা ভেবেই নিবার্চন কমিশনে ২০০৮ সাল থেকে আবেদন করে আসছি।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের জন্য প্রশাসনিক এলাকার সৃজন, বিয়োজন ও সংকোচনের তথ্যাদি চেয়ে নিবার্চন কমিশন পত্র দিয়েছেন। ওই পত্রের আলোতে বরগুনার সংসদীয় এলাকার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যথা সময়ে তথ্যাদি পাঠানো হবে।
এমবি