সরিষার সোনালি ফুল দ্যুতি ছড়াচ্ছে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে
কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:০৫
কুমিল্লায় সবুজ মাঠ আর কৃষকের মুখে হাসি একাকার। এবার সরিষার সোনালি ফুল দ্যুতি ছড়াচ্ছে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে। প্রতিটি জমির কোণে, প্রতিটি বীজের মাঝে, এক নতুন জীবন শুরু হয়েছে। কুমিল্লার কৃষকরা সরিষা চাষে এবারের মৌসুমে ব্যাপক আশাবাদী। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে, তাহলে সরিষার ফলন গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি হবে।
কৃষকরা জানান, সরিষা ঘরে তুললেই ধান চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করতে হবে। এখন এসব এলাকায় চাষিরা সরিষার পরিচর্যায় ব্যাপক সময় ব্যয় করছেন। জমি থেকে পাকা সরিষা সংগ্রহ করতে পারলেই তাদের চিন্তা দূর হবে। তাঁরা নতুন বছরের ধান চাষের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবেন।
কুমিল্লা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ হাজার হেক্টর, যার মধ্যে প্রায় ১১ হাজার ৫২ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। কৃষকরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ করছেন, তবে বারি ১৪, ১৫, ১৭, ১৮, বিনা ৪, ৯, ১১-সহ বেশ কয়েকটি জাতের সরিষা সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে।
সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারার বামিশা এলাকার কৃষক এটিএম ইদ্রিস বলেন, ‘দেশে তেলের ঘাটতি মেটাতে আমরা সরিষা চাষ করেছি। আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে, তাহলে এই জমি থেকে যে ফলন পাব, তা দুই বছর পর্যন্ত আমাদের পরিবার খেতে পারবে।’
কৃষক জয়নাল বলেন, ‘এবার বাজারে সরিষার দাম বেশি পাওয়ার আশা করছি। অন্যান্য ফসলের মতো সরিষা চাষে তেমন শ্রমের প্রয়োজন হয় না। জমি থেকে পাকা সরিষা সংগ্রহ এবং মারাই করার কাজের জন্য পরিবারের পুরুষ, নারী, বৃদ্ধ ও শিশু সদস্যরা একযোগে কাজ করেন।’
সদর উপজেলার দূর্লভপুর গ্রামের কৃষক মোহন আলী বলেন, ‘সরিষা চাষে খরচ কম এবং অল্প সময়ে ফলন ঘরে তোলা যায়। যদি ঝড়-বৃষ্টি না হয়, তাহলে চলতি মৌসুমে সরিষার ফলন বেশ ভালো হবে। সরিষার বাজারদর এখন মণপ্রতি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। রোদে শুকিয়ে গুদামে রাখলে পরবর্তীতে দাম আরও বাড়তে পারে। তবে অভাবের তাড়নায় ফসল ঘরে তোলার পরই বিক্রি করে দিতে হয়।’
কুমিল্লার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইয়ুব মাহমুদ বলেন, ‘এ বছর জেলার সব উপজেলায় প্রায় ১৬ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে, এই মৌসুমে সরিষার ভালো ফলন হবে। সরিষা চাষিরা এবারের মৌসুমে লাভবান হবেন।’
এভাবে কুমিল্লার কৃষকরা একদিকে যেমন সরিষার সোনালি ফুলে নতুন সম্ভাবনার সন্ধান পাচ্ছেন, অন্যদিকে তাদের পরিশ্রমের ফলেও হয়ে উঠছে সোনালি সরিষা—একটি জীবন্ত কাব্য, যা তাদের সংসারের চাকা ঘুরিয়ে দেয়।
সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ/এমজে