Logo
Logo

সারাদেশ

সিলেটের গ্যাসে সমৃদ্ধ জাতীয় গ্রিড

Icon

রেজাউল হক ডালিম

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:২০

সিলেটের গ্যাসে সমৃদ্ধ জাতীয় গ্রিড

গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সিলেট। সিলেটের মাটির নিচ থেকে উত্তোলিত গ্যাস দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে বেশ বড় ভূমিকা পালন করছে। পাশাপাশি সমৃদ্ধ করছে গ্যাসের জাতীয় গ্রিডকে।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ কর্পোরেশনের (পেট্রোবাংলা) তথ্যানুযায়ী, উৎপাদন অব্যাহত থাকা দেশের ২০টি গ্যাসক্ষেত্রের মজুত ৭ হাজার ১২৫ বিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে কেবল সিলেট বিভাগের ক্ষেত্রতে ৪হাজার ৩৮৬ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত রয়েছে।

জানা গেছে, বিভাগটির হবিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রে ৭২ বিলিয়ন, রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্রে এক হাজার ৭৩৩ বিলিয়ন, বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে ১৩৪ বিলিয়ন, সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলাধীন কৈলাসটিলা গ্যাসক্ষেত্রে ১ হাজার ৯৯৭ বিলিয়ন, হরিপুর গ্যাসক্ষেত্রে ৯৬ বিলিয়ন, বিয়ানীবাজার গ্যাসক্ষেত্রে ৮৬ বিলিয়ন, ফেঞ্চুগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রে ২০৭ বিলিয়ন এবং মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রে ৮১ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত রয়েছে।

এছাড়া সিলেট মহানগর এলাকার জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রে নতুন করে মজুত পর্যালোচনার কাজ চলছে। সিলেট ছাড়া দেশের অন্য ১১টি ক্ষেত্রগুলোতে দুই হাজার ৭১৯ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত রয়েছে। 

এদিকে, গত এক বছরে নতুন করে সিলেটের আরও পাঁচটি কূপে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। সবশেষ গত ২২ অক্টোবর সিলেট গ্যাস ফিল্ডের ৭ নম্বর কূপের একটি স্থানে এক হাজার ২০০ মিটার গভীরতায় গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এর আগে, ১৪ আগস্ট একই কূপের আরেকটি স্থানে দুই হাজার ১০ মিটার গভীরতায় দৈনিক উত্তোলনের মতো ৬ থেকে ৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যায়।

সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, গত ১৪ আগস্ট ৭ নম্বর কূপের একটি স্থানে দুই হাজার ১০ মিটার গভীরতায় দৈনিক ৬ থেকে ৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যায়। আর ২২ অক্টোবর একই কূপের আরেকটি স্থানে এক হাজার ২০০ মিটার গভীরতায় গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে।

তিনি জানান, বর্তমানে সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের অন্যান্য কূপ থেকে দৈনিক ৬০-৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। আর ৭ নম্বর কূপ থেকে দৈনিক ৭-৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দ্রুতই জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।

এর আগে, চলতি বছরের ২৪ মে খননকাজ শেষে সিলেটের কৈলাশটিলা গ্যাস ক্ষেত্রের ৮ নম্বর কূপে দৈনিক ২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। কূপের তিন হাজার ৪৪০ থেকে ৫৫ হাজার ফুট গভীরতায় ওই গ্যাস পাওয়া গেছিল।

এসজিএফএল সূত্রে জানা যায়, সিলেটে গত বছর থেকেই কূপ খনন ও গ্যাস অনুসন্ধান কাজ চলমান রেখেছে তারা। তারই অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের প্রথম দিকে কৈলাশটিলা ৮ নম্বর কূপে খনন কাজ শুরু হয়। প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কূপ খনন করা হয়।

প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস
 সিলেট গ্যাসফিল্ডস লিমিটেডের উৎপাদনে থাকা কূপগুলো থেকে এখন প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। চলতি বছরের মধ্যে আরও কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষে তারা সেই উৎপাদনকে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে নিয়ে যেতে চায়। আর সরকারের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে পারলে শুধু এই কোম্পানি থেকেই প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত করা সম্ভব হবে।

এক বছরে ৫ জায়গায় গ্যাসের সন্ধান
চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি সিলেট গ্যাসফিল্ডের আওতাধীন হবিগঞ্জের রশিদপুর ক্ষেত্রের ২ নম্বর কূপে গ্যাসের নতুন স্তরের সন্ধান মেলে, যার পরিমাণ প্রায় ১৫৭ বিলিয়ন ঘনফুট। তারও আগে গত বছরের ২৬ নভেম্বর দেশের সবচেয়ে পুরোনো গ্যাসক্ষেত্র হরিপুরের ১০ নম্বর কূপে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এর চারদিন আগে কৈলাশটিলায় পরিত্যক্ত ২ নম্বর কূপ থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। এখান থেকে দৈনিক ৭০ লাখ ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।

সিলেটের হরিপুরে প্রথম গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায় ১৯৫৫ সালে। এরপর আবিষ্কার হতে থাকে একের পর এক গ্যাসক্ষেত্র। বর্তমানে এসজিএফএল-এর আওতায় পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। সেগুলো হলো, সিলেটের হরিপুর গ্যাসফিল্ড, হবিগঞ্জের রশিদপুর গ্যাসফিল্ড, সুনামগঞ্জের ছাতক গ্যাসফিল্ড, সিলেটের কৈলাশটিলা গ্যাসফিল্ড ও বিয়ানীবাজার গ্যাসফিল্ড। এগুলোর মধ্যে ছাতক গ্যাসফিল্ড পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে ১৪টি কূপ থেকে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১০৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।

পেট্রোবাংলার সূত্র মতে, মজুত থাকার পরও নানা কারণে দেশের কয়েকটি ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে না। অনুত্তোলিত ক্ষেত্রের মধ্যে জকিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রে ৫৩ বিলিয়ন ঘনফুট রয়েছে। এসব গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা চলছে। এছাড়া ছাতক গ্যাসক্ষেত্রে বর্তমান মজুতের পরিমাণ ৪৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই গ্যাসক্ষেত্র নিয়ে কানাডিয়ান বহুজাতিক কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে চলা মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় বর্তমানে কোনো কাজ হচ্ছে না। মামলা শেষ হলেই বড় এই মজুত তুলে আনা সম্ভব হবে।

বিশেষজ্ঞদের কথা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাসের মজুত খুব বেশি নেই। দ্রুত ফুরাচ্ছে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন। বর্তমানে যে মজুত আছে, তাতে আগামী সাত বছরের কিছু বেশি সময় চলবে। তাই এখন উচিত, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম শেষ করে দ্রুত উত্তোলন কার্যক্রম শুরু করা। তা না হলে ভবিষ্যতে আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে যেতে হবে। এতে দেশের অর্থনীতির ওপর বেশ চাপ সৃষ্টি হবে।

এটিআর/


Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর