Logo
Logo

সারাদেশ

নীলফামারীতে পাউবোর অনিয়মই যেন নিয়ম

Icon

কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:৫০

নীলফামারীতে পাউবোর অনিয়মই যেন নিয়ম

ছবি : বাংলাদেশের খবর

তিস্তার প্রধান সেচ খাল থেকে মাটি তুলে খালের পাড় পুনর্বাসন ও মাটি শক্তিশালীকরণের মহোৎসব চলছে। খালের মাটি দিয়ে খালের পাড় বাধার কাজ করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী সুবিধা নিয়ে খালের বেট হতে ৫-৭ ফিট গর্ত খুড়ে মাটি নেয়ার সুযোগ দেওয়াসহ মাটি কাটার দৃশ্য আড়াল করতে বড়ভিটা জুরাবান্দা গেটে পানি ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

পানি ছেড়ে দেওয়ার ফলে খাল পানিতে ভরে যাচ্ছে। এ কারণে অবৈধভাবে মাটি কাটার গর্ত দেখা যাবে না। আরও গর্তগুলোও পূরণ করতে হবে। ফলে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করতে পারবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ ও জলঢাকা উপজেলায় তিস্তা প্রধান সেচ খালের ১৭.৯১ কিলোমিটার হতে ৩৩.৬৭ কিলোমিটার পর্যন্ত পুনর্বাসন ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প নেয়া হয়েছে। ৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকায় ৩০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে কাজটি শেষ করার শর্তে কাজটি পেয়েছিল পটুয়াখালির ঠিকাদার মিজানুর রহমান জেভি। তবে কাজটির এখনও সিংহভাগ কাজেই হয়নি। ফলে সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদনপত্র পাঠানো হয়েছে। কাজটির মূল ঠিকাদার মিজানুর রহমান জেভি এ কাজটি সাব ঠিকাদারি দিয়েছে খাদেমুল নামে এক ব্যক্তির কাছে।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, জুরাবান্ধা  স্লুইজগেট থেকে চেংমারী ব্রিজ পর্যন্ত প্রধান খাল ছিল শুকনো। এ সুযোগে ঠিকাদারের লোকজন এস্কেভেটর (ভেকু মেশিন) দিয়ে তিস্তা প্রধান খালের বেডের দুই ধার থেকে বড় বড় গর্ত খুড়ে মাটি তুলে নেয়। ৫-৭ ফিট গর্ত করে তারা মাটিগুলো পাড়ের উপরে রাখছে। ফলে খালের বেডের মাঝ অংশ উঁচু হয়ে পড়েছে। এতে পানি প্রবাহে অসুবিধা হবে। এছাড়া তারা খালের অধিগ্রহণকৃত জমি থেকে মাটি তুলেও খালের ডাইকের কাজ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। 

অপর দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, এস্কেভেটর  (ভেকু মেশিন) ব্যবহার করার কোনো নিয়ম নেই। তিস্তা প্রধান খালের বেট থেকে বড় বড় গর্ত খুড়ে মাটি নেয়ারও বিধান নেই। তারা দূরবর্তী এলাকা হতে মাটি নিয়ে এসে তিস্তা প্রধান সেচ খালের পুনর্বাসন ও মাটি শক্তিশালীকরণের কাজ করবে। 

অন্যদিকে তিস্তা প্রধান সেচ খালের বেটের দুই সাইট হতে ভেকু দিয়ে বড় বড় গর্ত ঘুরে অবৈধভাবে মাটি তোলায় এলাকাবাসীর মনে প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনকে ম্যানেজ করে তারা এ কাজটি করছে। এলাকাবাসীর আরও প্রশ্ন তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত না থাকলে তারা কীভাবে অবৈধভাবে মাটি তুলতে পারে। সম্প্রতি এলাকাবাসী কাজটি বন্ধ করে দিলেও তারা অবাধে মাটি তোলার কাজ অব্যাহত রাখে। ফলে পুনর্বাসন ও শক্তিশালীকরণ কাজটি দুর্বল কাজে পরিণত হয়েছে। অবৈধভাবে মাটি কাটা হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড দেখেও কেন না দেখার ভান করছেন। 

সাব ঠিকাদার খাদেমুল ইসলামের সঙ্গে (মোবাইল ফোনে) একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। 

পাইপ দিয়ে কেন পানি উত্তোলন করা হচ্ছে ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত কি না প্রশ্ন করা হলে বড়ভিটা জুরাবান্ধা তিস্তা সেচ খালের গেট অপারেটর হাসান বলেন, ‘ভাই আমি আসতেছি বলে ফোনটি কেটে দেন।’

সংশ্লিষ্ট কাজের উপসহকারী প্রকৌশলী একরামুল হক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বক্তব্য দিতে পারব না।’

নীলফামারী পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘পানি উত্তোলন বন্ধে সংশ্লিষ্ট এসওকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘পানি দিয়ে গর্ত অদৃশ্য করার কোন সুযোগ নেই। ঠিকাদারকে গর্ত পূরণ করতেই হবে। আমরা পরিদর্শনে দেখেছি তারা ৫ ফুটের বেশি গর্ত খুড়ে মাটি তুলেছে। যা নিয়মে নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে গর্তগুলো পূরণ করাসহ বাহির থেকে মাটি আনার জন্য চিঠি দিয়েছি। তাকে কয়েক দফা চিঠি দেয়া হলেও একই ভুল বার বার করছে। কাজ বাতিলের চিঠিসহ শর্ত মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আবু হাসান শেখ/এমআই

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর