জামায়াতের সমাবেশে বক্তব্য দিলেন জাসদ নেতা
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৪১
কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমির অডিটোরিয়ামে জামায়াতের সুধী সমাবেশ শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। জেলা জামায়াতের আয়োজনে মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে বক্তব্য দেন, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও কুমারখালী উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক জয়দেব বিশ্বাস। এ সময় তিনি পতিত শেখ হাসিনা সরকারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে বক্তব্য দেন।
এদিকে, জামায়াতের সুধী সমাবেশে জাসদ নেতার বক্তব্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়ে ভিডিওটি।
৫ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড দেওয়া বক্তব্যের প্রথম ২ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডে জয়দেব বিশ্বাস বলেন, ‘প্রধান অতিথি যেখান থেকে শেষ করেছিলেন, আবার সেখান থেকে শুরুটা হয়েছিল। আবার শেষটা কবে হবে, কীভাবে হবে, তা আমি জানি না। উনি যথাসময়ে শেষটা করেছিলেন, বলেই আজকে সারা বাংলাদেশের মজলুম জনগণ ও নিবেদিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করার সুযোগটা পেয়েছেন। এখানে আপনারা আছেন। আপনাদের উপরেও অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন, জুলুম হয়েছে।’
তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা অনেক সময় চায়ের দোকানে বসে গল্প করি। যার বয়স ৮০ বছর, ৮৫ বছর। অপরাধ যদি হয়েও থাকে, সেই লোকটাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করতে হবে, এমনটা কি সারা পৃথিবীর কোথাও আছে। অতএব আজকের যে এই অবস্থা, এই অবস্থা তৈরি হওয়ার পেছনেও বিষয়গুলো এখানে চলে আসছে। ঘা হলে তো, ফোঁড়া হলে তো তখনই বাস্ট হবে না। সাঈদী সাহেবের যখন ফাঁসির আদেশ হলো। আমাকে বলেন তো, যারা আওয়ামী লীগ করতো তাদের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ কেউ চায়নি যে সাঈদী সাহেবের ফাঁসি হোক।
তিনি আরও বলেন, আর সাধারণ মানুষ, জনগণ বিভিন্ন দল, আপনারা তো চানি নি।
জয়দেব বিশ্বাস দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ব্যাংকে টাকা নেই। ব্যাংকের টাকা লুট হয়, এটা সারা পৃথিবীর কোথায় আছে। হ্যাঁ ঘুষ কমবেশি সব জায়গায় আছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সম্পদ যেটা নিরাপদে রাখা হয় ব্যাংকে, সেই ব্যাংকে হাজার হাজার, লক্ষ কোটি টাকা নেই। সেখানে আবার স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, চেতনা।’
তিনি বলেন, ‘আমি ৫ আগস্টের পর ভারতে গিয়েছিলাম। আপনারা জানেন, সেখানে একটি হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে হত্যার প্রতিবাদে বড় আন্দোলন হয়েছিল। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে ধাক্কাইছে। কিন্তু পুলিশ একটা ধাক্কাও কাউকে দেয়নি। আর আমাদের কী হলো?’
সমাবেশে উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিক জানান, শনিবার (৪ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত জামায়াতের কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়ার জন্য কুষ্টিয়ায় আসেন ডা. শফিকুর রহমান। তিনি শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৪ মিনিটের দিকে কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে পৌঁছান। সেখানে তিনি দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন দেশ গড়ার লক্ষ্যে আয়োজিত সুধী সমাবেশে যোগ দেন।
সমাবেশে বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও শ্রেণীপেশার মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেই মঞ্চে জয়দেব বিশ্বাস জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের প্রতিনিধি হয়ে বক্তব্যে দেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের এক নেতা বলেন, সুধী সমাবেশে পূজা উদযাপন পরিষদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। জয়দেব বিশ্বাসের নেতৃত্বে পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিলয় কুমার সরকার, আওয়ামী লীগ নেতা রবীন্দ্রনাথ সেনসহ ৮ জন মতবিনিময় সভায় যান।
আওয়ামী লীগের শরিক দল জাসদ। স্বৈরাচার সরকারের দোসর হিসেবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা চালিয়ে হত্যার অভিযোগে দলটির কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসানুল হক ইনু এখনো কারাগারে। এ সময় একজন জাসদ নেতাকে জামায়াতের মঞ্চে বক্তব্য দেওয়াটাকে অন্যচোখে দেখছেন রাজনীকি সচেতন ব্যক্তিরা।
খোদ জাসদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক অসিত সিংহ রায় ‘আত্মঘাতী নেতা’ মন্তব্য করে বলেন, ‘এ বড় লজ্জার।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অনুপ নন্দী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর একাধিক হত্যা মামলার আসামি হয়ে পলাতক রয়েছেন তিনি। এদিকে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জয়দেব বিশ্বাস কুমারখালী উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক। স্বৈরাচারী সরকারের দোসর হিসেবে ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় তার বাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এরপর থেকে পূজা উদযাপন পরিষদকে পুঁজি করে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করে কৌশলে নিজেকে নিরাপদ রেখেছেন।
কুমারখালী উপজেলা জাসদের সভাপতি আব্দুল হান্নান বাংলাদেশের খবর বলেন, ‘কমিটির সাধারণ সম্পাদক জয়দেব বিশ্বাস। কিন্তু সংগঠনের কোনো কার্যক্রম নেই। বিষয়টি আমিও জেনেছি। সুধী সমাবেশে যাওয়া নিয়ে আমার সাথে কোনো আলোচনা হয়নি। সে তার ইচ্ছায় বক্তব্য দিয়েছে।’
এ ব্যাপারে জয়দেব বিশ্বাস বলেন, পূজা উদযাপন পরিষদকে মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। তারা ‘যেতে পারো’ বলেছিল। সাথে আরও ৮ জন ছিল। প্রতিনিধি হিসেবে আমি বক্তব্য দিয়েছি। তবে জাসদ নেতা হয়ে ওই মঞ্চে বক্তব্যের বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলিনি।’
এ বিষয়ে কথা বলতে কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মাওলানা আবুল হাশেমকে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
এমজে