ছবি : সংগৃহীত
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার হালিমা বেগম একাডেমী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, গত ৫ মাস ধরে বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকেও নিয়মিতভাবে বেতন গ্রহণ করছেন তিনি। তবে এসব অভিযোগ সত্ত্বেও স্থানীয় প্রশাসন এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে স্থানীয় জনগণের মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগের বিস্তারিত
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক অসিত কুমার যশোর শিক্ষা বোর্ডে শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রায় ১ কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়মের লিখিত অভিযোগ করেন। এসময় অনিয়মিতভাবে বিদ্যালয়ের টাকা উত্তোলন, উপবৃত্তি-টিউশনি ফি, ছাত্রদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি, সার্টিফিকেট বাবদ টাকা আদায় এবং বিদ্যালয়ের বিক্রির অর্থ আত্মসাৎসহ ১৩টি অভিযোগ আনা হয়।
এসব অভিযোগের প্রত্যেকটির সত্যতা পান উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিয়ে গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি। প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে যশোর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রয়েজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও অদৃশ্য খুঁটির বলে বহাল তবিয়তেই রয়েছেন শফিকুল। এছাড়া তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার পরও নিয়মিত বেতন গ্রহণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, শফিকুল ইসলাম দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ভেড়ামারার হালিমা বেগম একাডেমির প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি বিদ্যালয়ে হাজির না থেকেও বেতন নিচ্ছেন নিয়মিত। বেতন তোলার যে বই, সেখানে স্বাক্ষর করে প্রতি মাসেই তুলছেন মাসিক বেতন।
শিক্ষকদের উদ্বেগ ও প্রতিবাদ
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন কেন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, আমরা বিস্মিত।
বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিগত ৩ মেয়াদে একটানা ১৫ বছর জাসদের হাসানুল হক ইনু এমপি থাকায় কোনো শিক্ষক তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পায়নি। ১৬ বছরে তিনি সব রকমের অপকর্ম, দুর্নীতি আর অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে কয়েক কোটি টাকার ওপরে অবৈধ আয় করেছেন। ১৩টি অভিযোগের প্রত্যেকটির সত্যতা পেয়ে তদন্ত কমিটি বোর্ডকে বিষয়টি অবহিত করে। শিক্ষা বোর্ড ২৭ আগস্ট প্রচলিত বিধি অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক শফিকুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু অদৃশ্য খুঁটির বলে এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
অভিযুক্তের বক্তব্য
অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য শফিকুল ইসলামের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে স্বামীর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে শফিকুলের স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামী হালিমা বেগম একাডেমী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা। সে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ছুটি নিয়ে গত ৫মাস স্কুলে যায় নি।’ শফিকুল নিয়মিতভাবে বেতন পাচ্ছেন বলেও স্বীকার করেন তিনি।
শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি
ভেড়ামারা উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফারুক আহমেদ বলেন, শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ তার দপ্তরের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। তবে তিনি বিষয়টি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে সমাধান করার আহ্বান জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন,‘শফিকুল ইসলামের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছিল। তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলে যশোর শিক্ষা বোর্ড প্রশাসনকে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেয়। আমি পদাধিকার বলে বিদ্যালয়টির এডহক কমিটির সভাপতি থাকা অবস্থায় গত নভেম্বর মাসের ৭ তারিখে একটি মিটিং ডেকেছিলাম। কিন্তু নভেম্বরের ৩ তারিখে শিক্ষা বোর্ড নতুন এডহক কমিটি নির্বাচনের প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাই আর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।’
অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও শফিকুলকে তার দায়িত্বাধীন এক মাসের বেতন দেওয়ার বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি নতুন তাই দিয়েছি। তবে সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী মাস থেকে তিনি যেন আর বেতন না পান, তার ব্যবস্থা নেব।
এটিআর/