Logo
Logo

সারাদেশ

সোনারগাঁয়ের অঘোষিত সরকার মান্নান

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৭

সোনারগাঁয়ের অঘোষিত সরকার মান্নান

ছবি : সংগৃহীত

আজহারুল ইসলাম মান্নান নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার প্রধান ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর পরই সোনারগাঁ উপজেলায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন তিনি। হয়ে ওঠেন সোনারগাঁয়ের অঘোষিত সরকার। তার বিরুদ্ধে একাধিকবার বিএনপির কেন্দ্রীয় নীতি-নির্ধারকদের কাছে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগও করা হয়। যেখানে সুনির্দিষ্টভাবে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে বিএনপির ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ হওয়ার তথ্যও ছিল।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময়ে মান্নান মেঘনা নদীসহ বিভিন্ন জলাশয়ের নিচ থেকে ডুব দিয়ে বালু উত্তোলনের পাশাপাশি মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরে আলাদিনের চেরাগের মতো একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সুদৃষ্টিতে আসায় তার ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন হয় কয়েক বছরেই। কিছুটা জাতে ওঠে বনে যান মান্নান সাহেব। চলাচল করেন কোটি কোটি টাকার গাড়িতে। করেন বিলাসী জীবনযাপন।

সূত্রের দাবি, বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা মান্নান গত ৫ আগস্টের পর এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন যে,পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম ৫ আগস্টের পর এলাকা থেকে পালিয়ে গেলে তার বাড়িঘরে হামলা চালানো হবে না মর্মে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা নেন মান্নান। তবে এতেই ক্ষান্ত নন তিনি, ৫ আগস্টের ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে হতাহতের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় ৬টি মামলা হয়। সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর ও ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় (সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ব্রিজের ঢালে ঘটনাস্থল দেখিয়ে) এসব মামলা করা হয়। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামির পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী, সাধারণ ব্যবসায়ী এবং দিনমজুরসহ নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে আরও প্রায় চার হাজার মানুষকে আসামি করা হয়। আর এসব মামলার নেপথ্য কারিগর হিসেবে সোনারগাঁ বিএনপি সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানের নামই আসে।

সূত্র আরও জানায়, নিরপরাধ মানুষদের মামলা দিয়ে বাড়ি ছাড়া করে ঘরবাড়ি দখল, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল এবং ইকোনমিক জোনের সব ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করাই এখন মান্নান ও তার ছেলে খাইরুল ইসলাম সজিবের পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে আজহারুল ইসলাম মান্নান এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘৫ আগস্টের ঘটনার পর দেশের অন্য যে কোনো এলাকার চেয়ে আমাদের এই এলাকা অনেক শান্ত ছিল, কোনো আওয়ামী লীগ পরিবারের বাড়িঘর ভাঙচুর হয়েছে? কোনো হিন্দু পরিবারের বাড়িঘর ভাঙচুর হয়েছে? কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানে আঁচড় লাগছে? কোনো সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকলে মামলা হবে।’ আপনি কি তাহলে অভিযোগ মেনে নিলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে আজহারুল বলেন, ‘আমি যদি বলি আমি চাঁদাবাজি করিনি, তাহলে তো আপনি মানবেন না। আমি দোষী হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিভিন্ন মানুষকে মামলায় জড়ানো প্রসঙ্গে উপজেলা বিএনপির এই সভাপতি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যে সব ছাত্র মারা গেছে, তাদের পরিবার মামলা করেছে। আমি তো করিনি, আর মামলায় আমি বাদীও নই, তাহলে এগুলো আমি কীভাবে করছি?’

গত ৫ জানুয়ারি দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে মান্নানের রোষানলে পড়া মমতাজ বেগম নামে এক ভুক্তভোগী নারী তার কুকর্ম তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেন। ভুক্তভোগী মমতাজ বেগম উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের মেঘনা নিউটাউন সংলগ্ন প্রতাপেরচর এলাকার তমিজ উদ্দিনের স্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মমতাজ জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন উপজেলা বিএনপি সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানের নেতৃত্বে ঝাউচর গ্রামের সালাউদ্দিনের ছেলে জুয়েল, ইয়াসিনের ছেলে রিপন, হযরত বেপারীর ছেলে আলী নূর, প্রতাবের চর গ্রামের লাল মিয়া বেপারীর ছেলে খোরশেদ, আজমের ছেলে বাবুসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০০-১৫০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল তার ভাড়াবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।

পরেরদিন ৬ আগস্ট মমতাজের ১৪ ইউনিটের ৪ তলা ভবনটিতে থাকা ভাড়াটিয়াসহ তার পরিবারের সদস্যদেরকে মারধর করে ভবন থেকে থেকে বের করে দেয় এবং ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ করে বিল্ডিংটিতে ভাঙচুরের পর মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

মমতাজ জানান, এতেই ক্ষান্ত হননি মান্নান। স্থানীয় ক্ষমতার প্রভাবে পরবর্তীতে তার বাড়ির মেইন গেটটি ইটের দেয়াল দিয়ে বন্ধ করে দেয় এবং ভবনের ভিতরের কলাপসিপল গেটসহ সকল রুমে তালা লাগিয়ে দেয়। এমনকি বাড়িতে থাকা আম, জাম, কাঁঠাল ও কাঁঠ গাছসহ প্রায় ৬০ থেকে ৭০টির বেশি গাছ কেটে নিয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, তার বাড়ির মেইন গেট সংলগ্ন ভাড়া দেওয়া ৩টি দোকানেও ভাঙচুর চালিয়ে দোকানগুলো বেআইনিভাবে উচ্ছেদ করে ৭ থেকে ৮ ফুট উঁচু দেয়াল নির্মাণ করে রাখেন মান্নান। এছাড়া তার আরও তিনটি টিনশেট বাড়ি মান্নান সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দখল করেন। 

এ সকল বিষয় তদন্তপূর্বক প্রতিকার চেয়ে গত ১১ আগস্ট ভুক্তভোগী মমতাজ বেগম সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ১৮ আগস্ট সোনারগাঁ থানা এবং ২৩ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সেনাবাহিনীর ক্যাম্প বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু এখনো কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় গণমাধ্যমকর্মীদের শরণাপন্ন হন তিনি।

এটিআর/

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর