Logo
Logo

সারাদেশ

যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে শিকলে বেঁধে নির্যাতন

Icon

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:২০

যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে শিকলে বেঁধে নির্যাতন

তিন দফায় স্বামীকে যৌতুক হিসেবে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন গৃহবধূর তানিয়ার পরিবার। এরপরও টাকার দাবিতে মেয়ের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে স্বামীসহ তার পরিবারের লোকজন। সর্বশেষ গত দুই দিন ধরে তানিয়ার পায়ে শিকল বেঁধে তালাবদ্ধ রাখা হয়। খবর পেয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে মেয়ের পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় দেখতে পান  তানিয়ার বাবা। এমনটি কেনো করা হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে স্বামী সোহেল রানা তাকেও মারধর করে আটকে রাখেন। খরব পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই গৃহবধূ ও তার বাবাকে উদ্ধার করে।

এ ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বাদেডিহী গ্রামে। অভিযুক্ত স্বামী একই উপজেলার বারোবাজার বাদেডিহী গ্রামের ট্রাক চালক সোহেল রানা, তার মা মাহমুদা বেগম ও বোন রুমি বেগম।

গৃহবধূ তানিয়া খাতুন একই উপজেলার মঙ্গলপৈতা গ্রামের রিপন গাজির মেয়ে। পারিবারিকভাবে আট বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তাদের ৫ বছর ও ৩ মাসের দুই মেয়ে সন্তান রয়েছে। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার রাতে তানিয়ার বাবা রিপন গাজি বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছেন।

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে একই দিন দুপুরে শিকলে বাঁধা অবস্থায় তানিয়া আক্তার ও তার বাবাকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় রাতেই ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে তিনজনের নামে মামলা করেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- তানিয়ার শাশুড়ি মাহমুদা খাতুন ও ননদ রুমি খাতুন। তবে মামলার প্রধান আসামি সোহেল রানাকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

তানিয়ার বাবা রিপন গাজী বলেন, বিয়ের পর থেকে জামাই সোহেল রানা তার মেয়েকে প্রায়ই যৌতুকের জন্য মারধর করতো। এ জন্য মেয়ে বেশির ভাগ সময় আমার বাড়িতেই থাকে। প্রায় এক মাস হলো মেয়েকে জামাই নিয়ে গেছে। সোমবার সকালে তানিয়াকে মারধর করে পায়ে শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ ঘরে আটকিয়ে রাখে। খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে জামাই বাড়ি আসি। সেখানে এসে জামাই সোহেল রানার কাছে ঘটনা জানতে চাই। এ সময় উত্তেজিত জামাই আমাকেও মারধর করে। এরপর ধারালো দা দিয়ে আমার পায়ে কোপ দিয়ে রক্তাক্ত করে। পরিস্থিতি খারাপ দেখে আমি স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পে খবর দিই। পুলিশ বেলা ১১টার দিকে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।

তিনি আরও জানান, জামাইকে আমি তিন কিস্তিতে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি। তারপরও টাকা দাবি করে প্রায়ই মেয়ের ওপর নির্যাতন করে আসছে।

নির্যাতিত গৃহবধূ তানিয়া জানান, বিয়ের পর থেকে আমার স্বামী আমাকে মারপিট করেন। দ্বিতীয় মেয়ে গর্ভে আসার পর আমাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। ২৭ দিন আগে আমাকে বাড়ি নিয়ে আসেন। গত সোমবার আমাকে শাশুড়ি, স্বামী ও ননদ মিলে মারধর করে। এরপর আমাকে পায়ে শিকল দিয়ে তালা মেরে আটকে রাখে। বাবা এসে নির্যাতনের কারণ জানতে চাইলে ওনাকেও মারধর করে। পরে পুলিশ এসে উদ্ধার করে। এমন যৌতুকলোভী স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনদের শাস্তি হওয়ায় উচিত।

কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা অবস্থায় এক গৃহবধূ ও তার বাবাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। পুলিশ দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

এম বুরহান উদ্দীন/এমবি 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর