মেছোবাঘ আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন গ্রামবাসী
টঙ্গীবাড়ী (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:৪১
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার রাউৎভোগ, রবনগরকান্দি ও মটুকপুর গ্রামের কয়েকশো পরিবার মেছোবাঘ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। সম্প্রতি দুটি মেছোবাঘ গ্রামগুলোতে দেখা যাওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ভয় ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, বুধবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাউৎভোগ গ্রামের লোকজন দুটি মেছোবাঘ দেখতে পান। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে স্থানীয়রা একত্রিত হলে বাঘ দুটি সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে রাউৎভোগ গ্রামের কাদির মেম্বারের বাড়ির পাশের পানের বরজে একটি আহত মেছোবাঘ দেখা যায়। উত্তেজিত গ্রামবাসী বাঘটিকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেন। নিহত বাঘটিকে প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা আকৃতির হিসেবে বর্ণনা করেছেন স্থানীয়রা।
গ্রামবাসীর দাবি, মেছোবাঘ দুটি বেশ কিছুদিন ধরে এলাকায় ঘোরাফেরা করছিল। রবনগরকান্দি গ্রামে একটি মেছোবাঘ ছাগলের বাচ্চা ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এর পর থেকে এলাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছিল।
বুধবার সন্ধ্যায় রাউৎভোগ এলাকায় বাঘের গর্জন শোনার পর মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসী একত্রিত হন। এক যুবক টেঁটা ছুঁড়ে বাঘটিকে আঘাত করলে সেটি আহত হয়। পরদিন সেটিকে ধরে হত্যা করা হয়। তবে দ্বিতীয় মেছোবাঘটি এখনো ধরা পড়েনি, যা এলাকাবাসীর উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবির ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, ‘বাঘটি হত্যার পর মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। আমি গ্রামবাসীকে বুঝিয়েছি, বন্যপ্রাণী দেখলে তারা যেন আমাদের খবর দেন। আমরা তা উদ্ধার করব, সুরক্ষা দেব। বন্যপ্রাণী মেরে ফেলা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।’
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেছোবাঘ মানুষের জন্য সরাসরি হুমকি নয়। সাধারণত বনাঞ্চল থেকে খাদ্যের সন্ধানে তারা মানুষের বসতিতে চলে আসে। এ ধরনের প্রাণী হত্যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, মেছোবাঘের আতঙ্কে তাদের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। রবনগরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহিন বলেন, ‘বাঘের গর্জনে পুরো গ্রাম আতঙ্কে থাকে। আমাদের শিশু ও গবাদিপশু রক্ষায় আমরা সবসময় ভয়ে আছি।’
গ্রামবাসী এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বন বিভাগের পক্ষ থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের জানানো হয়েছে, মেছোবাঘ দেখলে তা হত্যা না করে দ্রুত বন বিভাগে খবর দেওয়ার জন্য। এ ধরনের প্রাণী ধরা ও সংরক্ষণ বন বিভাগের দায়িত্ব।
এমজে