Logo

সারাদেশ

উচ্চ মুনাফার লোভে জমা রেখেছিলেন, ‘জলে গেল’ কষ্টের টাকা

Icon

নীলফামারী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৪৮

উচ্চ মুনাফার লোভে জমা রেখেছিলেন, ‘জলে গেল’ কষ্টের টাকা

অভিযুক্ত ব্যাংক ম্যানেজার জাহিদ শাহ।

নীলফামারীতে আজিজ কো-অপারেটিভ কর্মাস অ্যান্ড ফাইন্যান্স (এসিসিএফ) ব্যাংকে গ্রাহকদের জমা রাখা প্রায় দেড় কোটি টাকার খোঁজ নেই। লাপাত্তা হয়েছে বাংকটির ম্যানাজার। মুনাফা অর্জনের আশায় লাখ লাখ টাকা জমা রাখা গ্রাহকরা এখন তাদের টাকা ফেরত পেতে চেয়ে আশাহত। ব্যাংকটির ম্যানেজার জাহিদ শাহর বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তাকে এখন ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রাহকরাও টাকা পাওয়ার কোনো আশা দেখছেন না। কষ্টের টাকা যেন জলেই গেল। 

এসিসিএফ ব্যাংকটি ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও গত ২০১৮ সালের জুলাই মাসে শহরের কিচেন মার্কেটের সাব্বির ভিলার দ্বিতীয় তলায় কার্যক্রম চালু হয়। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটি তার কার্যক্রম পরিচালনা করলেও স্থানীয় প্রশাসন জানাচ্ছে নীলফামারীতে এ ধরনের ব্যাংকের নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন হয়নি।

জেলা সমবায় কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ‘এসিসিএফ ব্যাংকটির নিবন্ধন নেই। এটি আইন না মেনে কাজ করেছে। তারা ঋণদান কার্যক্রম চালাচ্ছে, যা সমবায় আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।’

এক বছরের বেশি সময় ধরে বেশ কয়েকজন গ্রাহক তাদের টাকায় মুনাফা আনার আশায় এসিসিএফ ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছিলেন। গ্রাহক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়ের বিয়ের জন্য ৬০ হাজার টাকা জমা রেখেছিলাম। আজ ব্যাংক বন্ধ, আমি টাকা পাচ্ছি না। এখন আমার পক্ষে আর কিছুই করার নেই।’

মনছুর রহমান নামে এক গ্রাহক বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে এক লাখ ১০ হাজার টাকা ম্যানেজার জাহিদের কথা মতো রেখেছিলাম। সে আমার পরিচিত হওয়ায় কিছু লাভের আশায় সরল বিশ্বাসে টাকা জমা রেখেছিলাম। এখন টাকা না পেলে বাড়িতে আমি মুখ দেখাতে পারব না।’

৫ আগস্ট থেকে ব্যাংকের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। গ্রাহকরা জানতে পারেন, তারা আর জমাকৃত টাকা ফিরে পাবেন না। যখন তারা ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে আসেন, তখন গেট তালা মারা থাকে। এর পর থেকে ম্যানেজার জাহিদ শাহসহ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গা ঢাকা দিয়েছেন।

কয়েকজন গ্রাহক বলেন, ‘আমরা টাকা তোলার জন্য ব্যাংকে গিয়ে গেট তালা দেখে হতাশ হয়ে পড়েছি। আশপাশের লোকদের মুখে শুনে আমরা জানতে পারি, আমাদের মতো অনেকেই টাকার জন্য ঘুরছে।’

শামিম মিয়া বলেন, ‘আমি সাত লাখ ৫০ হাজার টাকার চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা লাভ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন লাভ তো দূরের কথা, আসল টাকাও নেই।’

গ্রাহকরা অভিযোগ করেন, ব্যাংকের ম্যানেজার জাহিদ শাহ তার ব্যক্তিগত উপকারের জন্য তাদের টাকা ব্যবহার করেছেন। একাধিক গ্রাহক জানান, ব্যাংকে তাদের জমা রাখা টাকার বিষয়ে কোনো তথ্য তারা কখনো জানতেন না। এই টাকার বেশির ভাগই ম্যানেজার নিজের নামে রেখেছিলেন।

এ বিষয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ‘এসিসিএফ ব্যাংকটি অবৈধভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে জানিয়েছি।’

এ পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে প্রতিটি স্তরে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা চান, তাদের কষ্টের টাকা ফিরে পেতে এবং যারা এই কাজের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

ব্যাংকের ম্যানেজার জাহিদ শাহর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। 

তৈয়ব আলী সরকার/এমজে

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর